নারায়ণগঞ্জে দেবদুলাল ও দিপ্তী রাণী দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নিয়েছে একসঙ্গে চার সন্তান। এতে ওই পরিবারের সবাই ভাসছেন খুশির জোয়ারে। তবে নবজাতকদের ওজন কম হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা দেবদুলাল চন্দ্র বর্মণ। বর্তমানে নবজাতকদের স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালের নিউবর্ন ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিউ) রাখা হয়েছে। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দরিদ্র বাবা দেবদুলাল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রংপুরের পীরগাছা এলাকার দেবদুলাল গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করে। এর আগে ২০২০ সালের শেষের দিকে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার থানগাঁও গ্রামের দিপ্তী রানীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর এবারই প্রথম তাদের ঘরে সন্তান আসে। 

গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় কুমিল্লার চান্দিনা মেডিকেয়ার হাসপাতালে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম দুজন মেয়ে ও পরের দুজন ছেলেসন্তান। জন্মের সময় চার সন্তানের ওজন কম হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এনআইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দিলে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের এনআইসিইউতে তাদের ভর্তি করা হয়।

চার সন্তানের বাবা দেবদুলাল বর্মণ বলেন, প্রথমে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় ঘুরে এনআইসিউ বেড না পেয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি করি। ভর্তির সময় হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চার সন্তানের জন্য প্রতিদিন চিকিৎসা বাবদ ৩২ হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য এত টাকা আমার মতো একজন পোশাক শ্রমিকের পক্ষে যোগান দেওয়া অসম্ভব। 

গত দুই দিন পরিচিতজন ও আত্মীয়দের সহায়তায় খরচ চালিয়েছি। কারও সহায়তা ছাড়া তাদের এই চিকিৎসার ব্যয় বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সহায়তা না পেলে তাদের বাড়ি নিয়ে যাব। বাঁচলে বাঁচবে, না হয় বাবা হিসেবে আমার আর কিছু করার থাকবে না।

তিনি বলেন, আমি চারজন নবজাতক নিয়ে নারায়াণগঞ্জে আর আমার স্ত্রী কুমিল্লায় একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দুই দিকের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে যেয়ে আমার ও পরিবারের দিশেহারা অবস্থা। এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় প্রতিদিন ৩২ হাজার টাকার হিসেব দিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। তবে এখন সাংবাদিক দেখে তারা ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার কথা বলেছেন। আমাকে এর আগে ৩২ হাজার টাকার হিসেব দিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতক প্রি-ম্যাচিউরড বেবি, অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের জন্ম হয়েছে। সাধারণত এই ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, আরডিএস, কান্না করতে না পারা, তাপমাত্রা ধরে রাখতে না পারাসহ নানা জটিলতা দেখা যায়। এ জন্য তাদের এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে, এনআইসিইউর চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল।

এনআইসিউতে চিকিৎসা ব্যয় এত বেশি কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, চার সন্তানকে নিয়ে তাদের পিতা দেবদুলাল রাজধানীর অনেক হাসপাতালে ঘুরে বেড না পেয়ে আমাদের হাসপাতালের এনআইসিউতে ভর্তি করেছেন। অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে আমরা অনেক কম খরচে চিকিৎসা দিচ্ছি। 

বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করে আমরা ১২-১৪ হাজার টাকার মধ্যে রেখেছি। তবে তার আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও কিছু ছাড় দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আরআই