স্কুলে গ্রন্থাগার আছে জানে না শিক্ষার্থীরা
বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। গ্রন্থাগার হচ্ছে জ্ঞানভান্ডারের উৎস। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগৎ সমৃদ্ধ করতে প্রতিটি স্কুলে গ্রন্থাগার থাকার কথা থাকলেও জামালপুরের অধিকাংশ স্কুলে সেই ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো স্কুলে গ্রন্থাগার থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। দিনের পর দিন তালাবদ্ধ গ্রন্থাগার। যেন দেখার কেউ নেই। স্কুলে গ্রন্থাগার আছে কিনা জানেও না শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে জামালপুর পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, গ্রন্থাগার তালাবদ্ধ। প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে লাইব্রেরিয়ানকে ডেকে নিয়ে গ্রন্থাগারটি খোলা হয়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল অবহেলায় পড়ে আছে সেখানে সংরক্ষণ করা বইগুলো। জরাজীর্ণ পুরো গ্রন্থাগারটি। অনেক বই বৃষ্টির পানি ঢুকে ভিজে গেছে । আবার ছিঁড়ে গেছে অধিকাংশ বই।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯১৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ২০২১ সালে লাইব্রেরিয়ানদের সহকারী শিক্ষকের পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযুক্ত কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের জন্য কোনো সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় এটি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার উপযুক্ত নয়। তবে সরকারি অনুদান বা সহযোগিতা পেলে গ্রন্থাগারকে আরও উন্নত করা যাবে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, জেনারেল ও ভোকেশনাল মিলে বিদ্যালয়টিতে ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর গ্রন্থাগারে কাগজে কলমে রয়েছে ১ হাজার ৩৬০টি বই। অনেক শিক্ষার্থী জানে না গ্রন্থাগার কী?
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলে, লাইব্রেরিতে কখনো যাওয়া হয়নি। সেখানে কী হয় তাও আমাদের জানা নেই।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান ছানোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদিন যাবত বৃষ্টি হওয়ায় ওপরের ছাদে লিকেজ থাকার কারণে গ্রন্থাগারে পানি ঢুকে বইগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গ্রন্থাগারে তালাবদ্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই সকাল বেলায় গ্রন্থাগার খোলা হয়। কিন্তু আজ খুলতে একটু দেরি হয়েছে।
শহরের বেলটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। সেখানে গ্রন্থাগার বলতে কোনো রুমই নেই। আছে একটি কন্ট্রোল রুম। তাও আবার তালাবদ্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান কামরুন্নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে পরীক্ষা ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে সেখানে বিভিন্ন আসবাবপত্র রাখা হয়েছে। আলাদা কোনো গ্রন্থাগার নেই এখানে।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলাফ বলে, বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি আছে কিনা আমার জানা নেই। কখনও লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টিতে ৮১২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। জায়গা সংকট থাকার কারণে লাইব্রেরি তেমন খোলা থাকে না। তবে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে পড়ে।
জামালপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরা মুস্তারী ইভা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ৩৬৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫০টিতে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া আছে। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা নেই। অনেকেই প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গ্রন্থাগার করে থাকে। মূলত কাঠামোগত সমস্যার কারণেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা নেই। আমরা অতি দ্রুত যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার নেই, সেখানকার ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আরএআর