সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে আমন মৌসুমের শুরুতেই সারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলোতে মিলছে না এমপিও সার। ডিলারদের কাছে কিছু পাওয়া গেলেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।দাম বেড়েছে ইউরিয়া সারেরও। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কীটনাশকের দাম। সবমিলে আমন আবাদে বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উফশি ৯৪ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয় ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হবে। 

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন। এবার ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ জন কৃষক আমনচাষ করছেন। কিন্তু ডিজেল এবং ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধিসহ চাষাবাদে খরচ খরচ বাড়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আমন চাষাবাদে ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে ৯২ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ২২ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন, ডিএপি ৪৩ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন, এমওপি ৫২ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন, জিপসাম ৩৬ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১০ হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৫ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩ হাজার ৮৮৭ মেট্রিক টন এবং জিপসাম ১৪ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার সুযোগে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন ডিলার এবং ব্যবসায়ীরা। 

বিশেষ করে এমওপি সারের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণের মতো। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সার সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দাম ৭০০ টাকা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে। অনেক সময় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএপিতে বস্তা প্রতি দাম বাড়িয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। শুধু ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সব  সারে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই কিনছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার কৃষক সামছুল মিয়া বলেন, আমি ইউরিয়া সার ২৫ টাকা কেজি দরে দুই বস্তুা কিনছি। দাম যতই হোক না কেন আবাদ তো করা লাগবে আমাদের। 

ওই ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার আব্দুল আউয়াল বলেন, সব কিছুর দাম বেড়েছে। তারপরও কষ্ট করে ২ বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করছি। এই আবাদে তো খরচ কম হয়, তবে এবার বোরো আবাদের মতো খরচ হবে। কেন না সারের দাম অনেক বেশি।

ছবরুল নামে এক কৃষক বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আমন আবাদ করার কথা ছিল। জমিও প্রস্তুত করছিলাম। সারের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার আমি আবাদ করব না। ঠিকমতো নাকি সারও পাওয়া যাচ্ছে না। 

নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা বাজারে কেদার ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স কাশেম ট্রেডার্সে দেখা যায়, দ্বিগুণ দামে এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে। সেখানে সাইদুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করা ঠিক না। ভুলে বিক্রি করে ফেলেছে। 

একই ইউনিয়নের সারের ডিলার আল মামুন জানান, এমওপি সারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তিনি তা কেনা-বেচা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাছাড়া এমওপি সার পাওয়াও যাচ্ছে না।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামসুদ্দিন মিয়া জানান, চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কম পাওয়ায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কিছু দিনের মধ্যে কেটে যাবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। 

জুয়েল রানা/এসপি