ভাইকে বাঁচাতে বোনের করুণ আকুতি
‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’― প্রবাদবাক্যটির মাহাত্ম্য ও গভীরতা বিশাল। কারও কাছে তার ভাই সন্তানের মতোই নাড়িছেঁড়া ধন। সে জন্যই হয়তো সন্তানতুল্য ছোট ভাই মো. দিলশাদ রহমান সীনের (৩০) জন্য অঝোরে কাঁদছেন বড় বোন উম্মে হানি প্রজাপতি। ভাইয়ের জন্য এতটই ভালোবাসা, যিনি কিনা নিজেও সন্তান নেননি। অথচ সেই ভালোবাসার রং আজ ফিকে হতে বসেছে। আস্তে আস্তে হেরে যাচ্ছে মরণব্যাধি ক্যানসারের কাছে। কিন্তু বাঁচার আকুতি কার না আছে?
হাসপাতালের বিছানায় ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রজাপতির প্রার্থনা, এ যাত্রায় আল্লাহ যেন ভাই সীনকে বাঁচিয়ে দেন। তার আশা, মানুষের সাহায্য আর দোয়ায় বেঁচে যেতে পারেন আদরের সীন। তাই ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সবার সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের হরিহরপুর এলাকার রোড বাজারের বাসিন্দা মো. রেজাউর রহমানের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট সীন। ঠাকুরগাঁও সুগারমিল স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি খুঁজছিলেন সীন। আশা ছিল, চাকরি করে বৃদ্ধ মা-বাবার শেষ বয়সের সম্বল হবেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে সেটি হতে দিচ্ছে কই? পরিবারের ভবিষ্যৎ উপার্জনক্ষম মানুষটি এখন হাসপাতালের বিছানায়। পায়ুপথে ক্যানসারে আক্রান্ত সীনের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে বাবা রেজাউর রহমান ও তার পরিবারের শেষ সম্বল বাড়িটুকুও হাতছাড়া হয়েছে।
সীনের বড় বোন প্রজাপতি ঢাকা পোস্টকে জানান, তার বাবা রেজাউর রহমান ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে পারচেস ক্লার্ক (পিসি) পদে চাকরি করতেন। চার বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ছেলে সীনই ছিল একমাত্র আশা-ভরসার স্থল। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে চাকরি খুঁজছিলেন সীন। কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তার পায়ুপথে ধরা পড়ে মরণব্যাধি ক্যানসার।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এর কয়েক মাস আগে থেকে সীনের পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, সীনের পায়ুপথে ক্যানসার হয়েছে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতালে। সেখানে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি পায়ুপথে রোবটিক সার্জারি করা হয়। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি চলে সীনের।
প্রজাপতি বলেন, রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চিকিৎসক বলেছিলেন, সীনের শরীরে আর ক্যানসার নেই। তবে পাঁচ বছর নিয়মিত চেকআপে থাকতে হবে। ছয় মাস পরপর চেকআপের জন্য যেতে হবে চেন্নাইয়ে। আমরা গত বছরের ৮ জুন দেশে চলে আসি। ১৬ ডিসেম্বর নিয়মিত চেকআপ করতে গিয়ে পেটসিটি পরীক্ষা করে জানানো হয়, সীনের শরীরের দুই জায়গায় ক্যানসারের অস্তিত্ব থাকতে পারে। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তখন আমরা দেশে ফিরে আসি।
এরপর ঢাকার ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, সীন নতুন করে আবার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য আমাদের বাড়ি-ঘর সবকিছু বিক্রি করে দিতে হয়েছে। সহায়-সম্বল বলতে কিছুই আর বাকি নেই।
সীনের শরীরে ক্যানসার যেন ছড়াতে না পারে, সে জন্য কেমোথেরাপির সঙ্গে অনেক দামি ইনজেকশন ও ওষুধ লাগবে। সীনের চিকিৎসার জন্য আমরা সর্বস্ব খুইয়েছি। এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি এখনো বাকি আছে। এখন আর কোনো পথ দেখি না।
উম্মে হানি প্রজাপতি, মো. দিলশাদ রহমান সীনের বোন
প্রজাপতি বলেন, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি আবার চেন্নাইয়ে আসি চিকিৎসার জন্য। এখানে আসার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, সীনকে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি দিতে হবে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রেডিয়েশন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহে ১০টা রেডিয়েশন দিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশি টাকায় ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। এরপর শুরু হবে কেমোথেরাপি। এর আগে সীনের জিন টেস্ট করা হবে। ৬টা থেকে ৮টা কেমোথেরাপি লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, সীন আর আমি ভারতে আছি। বাবা-মা বাংলাদেশে আছেন। এখানে হাসপাতালে থাকা অনেক খরচ। এ জন্য বাইরে একটা রুম ভাড়া করে আছি। অনেক টাকার প্রয়োজন। কীভাবে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভাইয়ের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি আমরা। ভাইকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা-ভারসা ছিল। আমাদের পরিবারের সবার মধ্যমণি সীন। তার জন্য আমি নিজে সন্তান পর্যন্ত নিইনি। এই ভাইয়ের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছি না। এখন তো আর এমন কিছুও নেই যে বিক্রি করব। সবার কাছে অনুরোধ, আমার ভাইকে বাঁচাতে সহযোগিতা করুন। আমার পরিবারের স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়। সরকারের কাছেও সাহায্য চাই ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য।
সীনের বাবা রেজাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সারাজীবন সৎ পথে চলেছি। ছেলেমেয়েদেরও বলেছি সৎ পথে জীবনযাপন করতে। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ছেলেই আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা ছিল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিল সীন। এর মধ্যে ক্যানসার সব শেষ করে দিল। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমার যা কিছু ছিল, সব শেষ করে ফেলেছি। প্রথমে বুঝিনি এত টাকা লাগবে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। তবু যদি আল্লাহ আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেন। সবার কাছে আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানাই। সবার সাহায্য আর দোয়ায় আমার ছেলে যেন আবার আমার কাছে ফিরে আসে, সেই প্রার্থনা করি।
সীন ও তার পরিবারকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: হিসাবধারীর নাম : এ. কে. এম. রেজাউর রহমান, হিসাব নম্বর: ১৯১৯১০০০০০১৯৬, ঠাকুরগাঁও সুগারমিল শাখা, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। অথবা বিকাশ করতে পারেন সীনের বাবার ০১৭১৫৭১৭৭২০ এই নম্বরে। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন চেন্নাইয়ে অবস্থানরত উম্মে হানি প্রজাপতির সঙ্গেও।
এনএ