হীরা লাল পাল। প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রতিমাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে সংসার চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ভাদুঘর পালপাড়ার প্রবীণ এই প্রতিমা শিল্পীর। সারা বছর মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করলেও দুর্গাপূজার মৌসুমে প্রতিমা তৈরি করে ভালো টাকা আয় করেন তিনি। তবে গেল দুই বছর করোনা মহামারির কারণে প্রতিমার কাজ কমে গিয়েছিল। আশানুরূপ আয় হয়নি মৌসুমি এই ব্যবসা থেকে।

তবে এবার হীরা লালের মুখে হাসি ফুটেছে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন তিনি। করোনা সংকট কাটিয়ে আবারও সুদিন ফিরেছে প্রতিমা শিল্পে। এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভালোই কাজ পেয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। জেলায় এবার ৩ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের প্রতিমা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের এই কর্মযজ্ঞ। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে এখন চলছে প্রতিমা রং করার কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫০-৬০ জন প্রতিমা শিল্পী আছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। দুর্গাপূজা এলে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। মৌসুমি এই ব্যবসা থেকে একেকজন শিল্পী আয় করেন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকারও বেশি। শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা সহযোগীরাও মৌসুমের এই সময়টাতে বাড়তি টাকা আয় করেন।

তবে গেল দুই বছর করোনার কারণে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমার পাশাপাশি প্রতিমার আকার ছোট হওয়ার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ে প্রতিমা বাণিজ্য। এতে করে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের প্রতিমা তৈরি থেকে বঞ্চিত হন প্রতিমা শিল্পীরা। মূলত প্রতিমার আকার এবং চাকচিক্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয় প্রতিমার মূল্য। তবে এবার অনেকটা জাঁকজমকপূর্ণভাবেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।

গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। এখন শিল্পীর রং-তুলির আচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে দেবী দুর্গাসহ অন্য দেবতাদের প্রতিমাগুলো।

রঞ্জিত চন্দ্র পাল নামে এক প্রতিমা শিল্পী জানান, তিনিসহ কয়েকজন মিলে কয়েকটি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি করেছেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘঁষামাজা।

আরেক প্রতিমা শিল্পী রবি পাল জানান, গত দুই বছর হাতে কাজ কম ছিল। এবার ভালো কাজ পেয়েছেন। গত দুই মাস ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি। মৌসুমি এই ব্যবসা থেকে এবার ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমা শিল্পী ঝণ্টু পাল জানান, গত বছর প্রতিমা তৈরি করে কিছুটা লোকসান হয়েছে। এবার তিনি ১৯টি মণ্ডপের কাজ পেয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবার প্রতিমার আকার বড় করা হয়েছে। এ বছর ব্যবসা করে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করছেন ঝণ্টু পাল।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৬০৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যদিও শেষ মুহূর্তে এই মণ্ডপের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মণ্ডপগুলোর জন্য ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের প্রতিমা তৈরি হয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকজসজ্জা সীমিত করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি প্রণব কুমার দাস বলেন, ‘করোনাকালে আমারা দুর্গোৎসব আয়োজন করেছিলাম সীমিত পরিসরে। এবার যেহেতু সেই সংকট নেই, তাই আমরা বর্ণিলভাবেই পূজার আয়োজন করতে যাচ্ছি। যে যার সাধ্যমতো প্রতিমা তৈরি করছেন। তবে একেকটি মণ্ডপের জন্য সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ বা তারও বেশি মূল্যের প্রতিমা তৈরি হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মাদ শাহীন জানান, ‘শারদীয় দুর্গা উৎসব ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ৫ অক্টোবর শেষ হবে। প্রত্যক কেন্দ্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে, যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’

এসপি