স্কুলের ১০৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুর সঙ্গে রিয়নের পরীক্ষার হলে থাকার কথা ছিল। আর তাই ফরম ফিল-আপের পর বাড়তি প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেষ পরীক্ষা দেওয়া আর হয়নি তার। 

পরীক্ষার ১২ দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিয়নকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানান দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে তার। সেই সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে বাম চোখটিও। নিজের কঠিন এসব রোগের বিষয়ে জানার পর এসএসসি পরীক্ষার দিন সকাল থেকে অঝোরে কেঁঁদেছেন তিনি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া নতুন হাট নামক এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে ১৭ বছর বয়সী খায়রুল বাসার রিয়নের জীবনের বর্তমান গল্প এমনই। বন্ধুরা যখন পরীক্ষা কেন্দ্রে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে লড়াই করছে তখন হাসপাতালের বেডে নিস্তেজ শুয়ে থেকে বেঁচে থাকার লড়াই করছে রিয়ন।

বাবা কামাল হোসেন অখ্যাত একটি ওষুধ কোম্পানিতে ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। পুরো সপ্তাহে কেবলমাত্র শুক্রবার অবসর পেলে খুব ভোরে ছুটে আসেন হাসপাতালে ছেলের কাছে। আবার মাঝরাতে ফিরে যান। তারপর আর পুরো সপ্তাহে আসতে পারেন না। রিয়নের মা নূরজাহান বেগম একা থাকেন হাসপাতালে ছেলের সেবায়।  

গুরুতর অসুস্থ রিয়ান এখন ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না। কাঁপা কাঁপা শরীরে উঠে বসে জানালো, আমি হোগলা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্র। এ বছর অন্তত জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু তা আর হলো না। অন্যরা সবাই পরীক্ষা দিয়েছে।

রিয়ন বলেন, আমরা খুব গরিব। আব্বা কয় টাকা বেতনে চাকরি করেন তা জানি না। কিন্তু তিনি যে বেতন পান তাতে আমার চিকিৎসা চলছে না।

রিয়নের মা নূরজাহান বেগম কান্নায় ভেঙে পরে বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ওর পায়খানা-প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হাসপাতালে এনে ভর্তি করালে ডাক্তার জানায় দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কিডনির কারণে ওর বাম চোখটিও পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ডাক্তার আমাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা কিডনি ইন্সটিটিউটে স্থানান্তর করেছেন। কিন্তু আমাদে রতো ওষুধ কেনারই টাকা নেই। ঢাকা নেব কীভাবে? চোখের সামনে আমার একমাত্র সন্তান ধুঁকে ধুঁকে অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যাচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। এসব বলেই তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

রিয়নের মামা আরিফুর রহমান বাবু বলেন, রিয়ন আমার বোনের একমাত্র সন্তান। বিগত এক বছর আগে ওর কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। এই এক বছর ধরে তার চিকিৎসা চালাই। চিকিৎসা চালাতে গিয়ে ওদের পরিবারটি পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল রিয়নের। কিন্তু, তা আর হলো না। ডাক্তার আমাদের বলেছে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু সেই সামর্থ আমাদের নেই। বরিশাল হাসপাতাল থেকে বলেছে তার চিকিৎসা বরিশালে আর নেই। কিন্তু টাকার অভাবে বরিশাল হাসপাতালেই রাখতে হয়েছে।

২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, কামাল হোসেনের ছেলে রিয়ন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। ওদের পরিবার অত্যান্ত গরিব। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। জেনেছি ছেলেটার দুটি কিডনি ও একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ১০৫ জন শিক্ষার্থী আমার স্কুল থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধুমাত্র রিয়ন অনুপস্থিত। ওর পরিবার খুবই অসচ্ছল। খুব খারাপ লাগছে ছেলেটির জন্য।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস