কারাগারের ভেতরে রাখা হয়েছে ছাগল

প্রায় ১২ দশমিক ২ একর জমির ওপর আশির দশকে অত্যন্ত সুরম্য প্রাচীর দিয়ে নির্মাণ করা হয় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় উপকারাগারটি। নির্মাণের ৪০ বছরেও নিবাস হিসেবে কোনো কয়েদির দেখা পায়নি কারাগারটি। দীর্ঘদিন এটি অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও ২০১৮ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বর্তমানে কারাগারটির নিয়ন্ত্রণ করছে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। তবে এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মচারী সপরিবার বসবাস করেন।

উপকারাগারটির প্রবেশপথে দেহরক্ষী থাকার কথা থাকলেও রাখা আছে দুটি ছাগল। মূল ফটকে প্রবেশ করতেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে মহিলা কয়েদির ওয়ার্ড। একটু সামনে গেলেই পুরুষ ওয়ার্ড। সেখানে কোনো কয়েদি না থাকলেও রয়েছে কয়েকটি গরু। পাশেই রয়েছে মুরগি পালনের ছোট একটি কক্ষ।

কুষ্টিয়ার উপকারাগার

সরেজমিনে দেখা যায়, হাঁস, মুরগি, গরু আর ছাগল পালনের খামার হিসেবেই বর্তমানে কারাগারটি ব্যবহার করছেন জেলা সমাজসেবা অফিসের একজন নাইট গার্ড। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেয়াল থেকে খসে খসে পড়ছে ইট-সিমেন্ট। দরজা-জানালার কাঠগুলো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কর্মচারীদের তিন কক্ষবিশিষ্ট কোয়ার্টারটি অনেক আগেই দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে সারা দেশের ১৭টি জেলায় ২৩টি উপকারাগার নির্মাণ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর মধ্যে একটি হলো কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উপকারাগারটি।

পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হচ্ছে গরু-ছাগল

কারাগারটি বর্তমানে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে খোকসা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এটিতে রয়েছে একটি প্রবেশপথ, দুটি কয়েদি রাখার হলরুম, দুটি সাক্ষাৎকার কক্ষ, একটি স্টোর রুম, দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি অফিস রুম। তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি কোয়ার্টার। রয়েছে বেশ কয়েকটি টয়লেট।

তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, কারাগারটি যথাযথ ব্যবহার করা হোক। এ বিষয়ে স্থানীয় দিনমজুর মাসুদ শেখ বলেন, কারাগারটি বানানোর সময় আমি লেবারের কাজ করেছিলাম। কিন্তু আজও এটি কাজে লাগেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বহু টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারাগারটি দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খোকসাবাসীর দাবি, কারাগারটি দ্রুত চালু করা হোক।

কারাগারে লালন করা গরু

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রোকসানা পারভীন বলেন, উপকারাগারটি নানা জটিলতায় আজও চালু হয়নি। তবে প্রতীকী মূল্যে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেখানে কিশোর শোধনাগার বা উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেল সুপার তায়েফ উদ্দিন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে এই উপকারাগার কিশোর শোধনাগার বা উন্নয়ন কেন্দ্রে রূপান্তর করে সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছে।

রাজু আহমেদ/এনএ