কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ব্রিজ নির্মাণে পাথরের সঙ্গে বালু, বালুর সঙ্গে ধুলা মেশানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জিসি গোপগ্রাম এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ব্রিজ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী দাবি করেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ব্যাপক অনিয়মের সত্যতা মেলায় এই নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে ব্রিজের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছিল নড়াইলের লোহাগাড়া থানার লক্ষ্মীপাশার মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দুই কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণের চুক্তি করে। নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস পার হলেও প্রকল্পের কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময় ছিল ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় পাঁচ মাস পরে ব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। ১৭ জুলাই কাজের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। 

পিলার বসাতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এমপি উদ্বোধন করে যাওয়ার পর নির্মাণ সামগ্রী ফেলা রাখা হয়েছিল। এক বছর মেয়াদি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও দেখা মেলেনি ব্রিজের। মাসখানেক আগে মাটির নিচে কয়েকটি পিলার নির্মাণ করে তারা। প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি)। 

স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকিবাজি শুরু করে। নির্মাণের শুরুর দিন থেকেই তারা পাথরের সঙ্গে বালু মেশানো, পরিমাণে পাথর কম দেওয়া, মোটা বালুর পরিবর্তে ফিলিং বালু মেশানো, দিনের পরিবর্তে রাতে ঢালাই, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম চালিয়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, এ অনিয়মের কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ দেয়। অনিয়ম দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রকৌশলী। তারা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে এ অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন।

গোপগ্রাম এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সব কাজের নয়ছয় করেছে। ব্রিজের পিলার নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু মেশানো পাথর। মোটা বালুর সঙ্গে চিকন বালু ও দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে ঢালাইয়ের কাজ। ব্রিজটি নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে আসছিল তারা। 

নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই পলাশ হোসেনের হাঁসের খামার। পলাশ উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ঠিকাদার পাথরের সঙ্গে বালু ও মোটা বালুর সঙ্গে ধুলা মিশিয়ে কাজ করছেন যা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ।

ওই এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে কাজ হলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, এক বছরেও ব্রিজের মুখ দেখতে পারলাম না। মানুষের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে।

কুমারখালী সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন। তিনি ওই ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন। তিনি বলেন, পাথরের বদলে শুধু বালু পাওয়া যাচ্ছে। ওপরে মোটা বালু থাকলেও ভেতরে ধুলাবালু। তিনি অভিযোগ করেন, অনিয়ম করতেই দিনের কাজ রাতে করা হচ্ছে।

মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বালু মেশানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ব্রিজের কাজ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের কাজ করায় কাজ বন্ধ থাকবে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজের মেয়াদও শেষ হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এসপি