স্কুটি চালিয়ে, হ্যান্ড মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজাতে দেখা যায় এক আগন্তুককে। গাছ লাগানোর উপকারিতা বিষয়ে পথসভা করেন মোড়ে মোড়ে, বিলি করেন পরিবেশ বন্ধু ফলজ ও ঔষধি গাছের লিফলেট। ফাঁকা জায়গা পেলেই নিজ উদ্যোগে এবং খরচে রোপণ করেন বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ। শুধু নরসিংদী নয়, তার বিচরণ দেশব্যাপী। 

বলছিলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুর রহমান সাদেকের কথা। নরসিংদীবাসীর কাছে তিনি পরিচিত বৃক্ষ চাচা নামে। নরসিংদী সদরের এই বাসিন্দার বয়স আশির কাছাকাছি, যুদ্ধ করেছেন তিন নম্বর সেক্টরে। কর্নেল নুরুজ্জামানের অধীনে কাজ করা এই যোদ্ধা স্বাধীনতার পরও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০০৩ সাল থেকে তিনি গাছ লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। সেই সঙ্গে লাগিয়েছেন অসংখ্য গাছ। গত দেড় যুগে তিনি প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ফলজ আর ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন। 

এভাবেই স্কুটি নিয়ে গাছ লাগাতে বেরিয়ে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুর রহমান

নরসিংদী শহরের ঢাকা-চট্রগ্রাম রেললাইনের পাশে লাগিয়েছেন সাতশ তালগাছ। কোর্ট রোড সংলগ্ন জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের ভেতরে লাগিয়েছেন অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ। তাছাড়া নরসিংদীর বাইরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে, রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান ও বিভিন্ন সরকারি জায়গায় লাগিয়েছেন হরিতকি, বহেরা, অর্জুন নানা ঔষধি গাছ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেও ছায়া দিচ্ছে তার লাগানো অসংখ্য গাছ। 

নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি পৌঁছে দিতে চান ঔষধি গাছের উপকারিতা। সেই সঙ্গে দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে ঔষধি গাছের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি। ‘কাঠ গাছ লাগাব বন জঙ্গলে, ফল আর ঔষধি গাছ বাড়ির আঙিনা-মসজিদ প্রাঙ্গণে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে গাছ লাগানোর পাশাপাশি তিনি কাজ করে যাচ্ছেন জনসচেতনতায়। 

বৃক্ষ চাচা সাদেক গাছ লাগাচ্ছিলেন নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু পার্কে। গাছের প্রতি ভালোবাসা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে কাজ করছি গাছ নিয়ে। কত গাছ লাগিয়েছি তার হিসেব রাখিনি, রাখার প্রয়োজনও মনে করিনি। এদেশ থেকে দারিদ্র্য শতভাগ বিলুপ্ত করতে হলে ঔষধি ও ফলজ গাছের বিকল্প নেই। কাঠ গাছ আমাদের শুধু কাঠ দেয়, কিন্তু ফলজ ও ঔষধি গাছ কাঠের পাশাপাশি ফলও দেয়। আবার কোনো কোনো গাছের ছাল বাকল ওষুধ হিসেবেও কাজে লাগে। 

তিনি আরও বলেন, সবাই শুধু সবুজ বিপ্লবের কথা বলে। কাজ করে কয়জন? আবার কাজ করলেও কাঠ গাছের প্রতি নেশা থাকে অনেকেরই। সব মিলিয়ে বিপ্লব থেকে সরে আসি আমরা। সত্যিকারের সবুজ বিপ্লব ঘটাতে এবং দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হলে ঔষধি এবং ফলজ গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।

নতুন প্রজন্মের জন্য কোনো বার্তা দিতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুনদের কাছে গাছের উপকারিতা তুলে ধরতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাইব আমাদের পরের প্রজন্ম ফলজ এবং ঔষধি গাছের প্রতি গুরুত্ব দিবে এবং সবুজ বিপ্লবের সম্মুখে থেকে কাজ করবে। 

এসপি