ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় আদালতের রায় ঘোষণার তিন বছর পর একটি কুচক্রী মহল নুসরাতের চরিত্র নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে ফেনী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মাহমুদুল হাসান বলেন, একটি কুচক্রী মহল ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও কনটেন্ট প্রচারের মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

তিনি বলেন, নুসরাত ছিল অত্যন্ত সাহসী, মেধাবী ও প্রতিবাদী স্বভাবের। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে ওই ঘটনার বর্ণনা দেয় সে। আমি নুসরাতের বক্তব্য মুঠোফোনে রেকর্ড করি। এমনকি আমার বোন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে (আইসিইউ) যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল, তখনো ডাক্তারের কাছে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেয়। অথচ কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারে নেমেছে। 

এদিকে দুপুরে নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে নুসরাত হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্ত ও আসামিদের ফাঁসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান। 

এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই বছরের ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। 

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

আরএআর