সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (রায়গঞ্জ অঞ্চল) বিজয়ী সদস্য প্রার্থী সুমন সরকারের বিরুদ্ধে জাল টাকায় ভোট কেনার অভিযোগ উঠেছে। শোনা যাচ্ছে আগের রাতে ভোটারদের টাকার বান্ডিল দেন তিনি। ভোটের দিন সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকালেও টাকা নিয়ে তাকে ভোট দেন অনেকে। কিন্তু ভোট শেষে বাজার করতে গিয়ে দেখা যায় টাকাগুলো নকল। তারপর থেকেই আর মুখ খুলছেন না কেউই। তবে বিষয়টি এখন জেলাজুড়ে আলোচনার শীর্ষে। 

শোনা যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে ভোটাররা প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই তিনি হুমকি দেন, বলেন নকল টাকা যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই পাকড়াও করবে পুলিশ। এরপরই মুখে কুলুপ এঁটেছেন ভোটাররা। কেউই স্বীকার করছেন না বিষয়টি।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী হিসেবে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তিনি গতবারও জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি জিতেছেন। তবে তিনি বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যকে জাল টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।  

রায়গঞ্জের সাংবাদিক শেখ মোস্তফা নুরুল আমিন গতকাল সোমবার বিকেলে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আজ জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার এক সদস্য প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষে ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবে ভোটারদের (সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার) টাকার বান্ডিল দিয়েছেন গত রাতে। আজ ভোট দিয়ে কিছু কেনাকাটা আর ফূর্তির জন্য বের হন তারা। কিন্তু পরখ করে দেখেন, রাতের অন্ধকারে কেনা-বেচার সব টাকাই জাল। কয়েক মেম্বার তাদের সেই প্রার্থীকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকেই কিন্তু পাকড়াও করবে পুলিশ। এ কথা শুনে স্তব্ধ হন তারা। ভোট কেনা-বেচার বাজারে এভাবে কত কিছুই না ঘটছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ভোট দিয়েই ধরা খেলেন ভোটাররা।

এসব বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ফিরোজ উদ্দিন খান বলেন, ভোটারদের মধ্যে টাকা ছড়িয়ে কোরআন শরীফ ছুঁইয়ে ওয়াদা করিয়ে ভোট নিয়েছে এটা এখন সর্বস্তরের জনগণই জানে। তবে জাল টাকা দিয়েছে কিনা, সেটা ভোটাররাই বলতে পারবে। শোনা যাচ্ছে, গতকাল ঘুড়কা বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে ভোটাররা দেখেন, তারা জাল টাকা পেয়েছেন। ধানগড়া বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েও জাল টাকা শনাক্ত করতে পেরেছেন কয়েক মেম্বার বলে শুনেছি। 

তিনি আরও বলেন, গতবারও আমি প্রার্থী ছিলাম, ৬৯ ভোটের মধ্যে ২২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। এবার ১৩০ ভোটের মধ্যে পেয়েছি নয় ভোট। এটা কীভাবে সম্ভব হলো বুঝলাম না। আমি ব্যক্তিগত সম্পর্কে ভোট প্রার্থনা করেছি, অর্থনৈতিক সম্পর্কে নয়।  

অপর পরাজিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বলেন, জাল নোটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। তবে কে কাকে জাল টাকার বান্ডিল দিয়েছে সেটা আমার জানা নেই।

এ বিষয় নিয়ে রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ও সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বললেও তারা বিষয়টি স্বীকার করেননি।

এ ব্যাপারে সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন বলেন, বিষয়টি শোনার পরে আমি আমার কয়েকজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি তবে কেও এটা স্বীকার করেনি। এমনটা হলে আমার জানার কথা। 

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ী প্রার্থী সুমন সরকার বলেন, আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বিজয়ী হয়েছি। কোনো টাকার লেনদেন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। টাকা লেনদেন এবং জাল টাকার বিষয়ে যারা লিখছেন, তাদের অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে। নইলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। 

রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় বলেন, আমরা সকাল থেকেই শুনছি জাল টাকায় ভোট কেনার বিষয়টি। আসলে সেটি প্রমাণ করা কঠিন। কারণ ভোটের মাঠে টাকা লেনদেন অপরাধ। আর জাল টাকার লেনদেন তো আরও বড় অপরাধ। তাই টাকা লেনদেনকারী কেউই বিষয়টি স্বীকার করবে না। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকলেও আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, এমন কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুভ কুমার ঘোষ/এমএএস