এবার কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে ৪৫ অভিযোগের তদন্তে ইউজিসি
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন সময়ে ওঠা ৪৫টি অভিযোগের তদন্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আরেকটি তদন্ত কমিটি। এজন্য উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানসহ অভিযোগ উত্থাপন করা সাত শিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৪ মার্চ তদন্ত কাজ পরিচালনা হবে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করতে বেরোবি যাচ্ছে ইউজিসির আরও একটি তদন্ত কমিটি। আগামী ১৪ মার্চ তদন্তকাজ পরিচালনা হবে। মঙ্গলবার (২ মার্চ) ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ইউজিসির তদন্ত কমিটির কাছে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দালিলিক প্রমাণসহ সাত শিক্ষককে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই পত্রের অনুলিপি উপাচার্যের একান্ত সচিবকেও দেয়া হয়েছে। এতে ১৪ মার্চ বেলা ১১টায় তদন্ত কাজ পরিচালনা করা হবে বলে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমান ইউজিসির তদন্ত কমিটি পাঠানো চিঠি প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৪৫টি অভিযোগের তদন্তসহ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানসহ সাত জন শিক্ষক।
অভিযোগকারী শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম তারিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল কবির, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়, লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন রয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর তাদের সেই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করেছে ইউজিসি। উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে আনীত ৪৫টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়েও অনুপস্থিতি থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক প্রশাসনিক পদ দখল ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন এবং সবক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা।
ইউজিসির তদন্ত কমিটির দেওয়া চিঠি প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, আমরা কয়েকজন শিক্ষক মিলে ২০১৯ সালে উপাচার্যের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ৪৫টি অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী বরাবর পেশ করেছিলাম। দীর্ঘদিন পর ইউজিসির একটি তদন্ত দল আগামী ১৪ মার্চ অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন বলে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। আমরা ওইদিন তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ প্রমাণের কাগজপত্রসহ স্বাক্ষীদের নিয়ে উপস্থিত থাকব।
সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ভবন ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন এবং স্বাধীনতা স্মৃতি স্মারক নির্মাণ কাজে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প ছিল। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া লঙ্ঘনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/ওএফ