গজারিয়ায় মেঘনা নদীর শাখা বুলির খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো

মেঘনা নদীর শাখা বুলির খাল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম আব্দুল্লাহপুর। এই ইউনিয়নের যোগাযোগের সংযোগ সড়ক থাকলেও আব্দুল্লাহপুর গ্রামে তা নেই। একটি সেতুর অভাবে এই গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে। গ্রামের কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েন। বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদেরও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল্লাপুর গ্রামের মানুষ জরুরি প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত এপার-ওপার হচ্ছে খালের ওপর তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সাঁকো পারাপার নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এই সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে আহত হচ্ছে। এরপরও কর্তৃপক্ষ নীরব বসে আছে। এখানে সাঁকোটির স্থানে পাকা সেতু তৈরি হচ্ছে না। তারা দ্রুত একটি সেতুর দাবি জানান।

দেশের সব স্থানেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে, কিন্তু এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। নির্বাচন এলেই এ অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন শেষে তাদের মাঠে দেখা যায় না। চর এলাকা নিয়ে কেউ ভাবেও না

ওই গ্রামের কলেজছাত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, জন্মের পর থেকে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছি। এই গ্রামে কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় সাঁকো পার হয়ে অন্য গ্রামে যেতে হয় লেখাপড়া শিখতে। কোমলমতি মেয়েদের সাঁকো পারাপারে চরম ঝুঁকি নিতে হয়। এক মাস আগে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী সাঁকো থেকে খালে পড়ে আহত হয়েছে। তা ছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষদেরও একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ, হাবিবুর রহমান, জব্বার আলী বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলসহ শাকসবজি এই গ্রামে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত হয়, যা আমরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে থাকি। কিন্তু এ গ্রাম থেকে সরাসরি গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় বুলির খাল পার হয়ে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, দেশের সব স্থানেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে, কিন্তু এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। নির্বাচন এলেই এ অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন শেষে তাদের মাঠে দেখা যায় না। চর এলাকা নিয়ে কেউ ভাবেও না।

বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান জুয়েল সরকার ঢাকাপোস্টকে বলেন, আব্দুল্লাহপুর গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস। ওই এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ও গর্ভবতী মা এবং মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নিতে সাঁকো পারাপারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরাবর বহুবার আবেদন করা হয়েছে। এ খালের ওপর একটি সেতু হলে যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে, আমার এলাকার মানুষ শান্তি পাবে।

এনএ