এক পা নেই, তবুও বিএনপির সমাবেশে হাজির কৃষক আজিজার
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে তিস্তা নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে রংপুরে এসেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী (পঙ্গু) আজিজার রহমান। পুলিশি বাধা আর ভয়ভীতি উপেক্ষা করে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এখন তিনি রংপুরে অবস্থান করছেন। ক্রাচে ভর করে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে ঘুরছেন তিনি।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব কৃষক আজিজার রহমানের সঙ্গে। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা হাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য। এক দুর্ঘটনায় ২০ বছর আগে বাম পা হারিয়েছেন। কিন্তু হারাননি মনোবল। বিএনপিকে ভালোবেসে এক পায়েই ছুটে যান সভা-সমাবেশে। এবার পরিবহন ধর্মঘটকে তোয়াক্কা না করে এক পা নিয়েই দলের বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে রংপুরে এসেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে এই দলের সঙ্গে তার সংখ্যতা। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী আজিজার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে ভালোবাসি দেখে রংপুর আসছি। বিএনপি যে দাবিতে সমাবেশের ডাক দিয়েছে তা যৌক্তিক। সরকার তেল, ডাল, চাল, চিনিসহ সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। আমাদের আয় রোজগার নেই। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না। আমরা বাঁচতে পারছি না।’
তিনি বলেন, অটোরিকশায় করে কুড়িগ্রাম থেকে খুব কষ্ট করে আসছি। আমি পঙ্গু লোক, আসার পথে অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু তবুও ভালো লাগছে, কারণ বিএনপি আমার ভালোবাসার দল। বৃহস্পতিবার রাতে রংপুরে আসার সময় একজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকা ধার করে নিয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও পাঁচজন এসেছে। তারা সবাই দলকে ভালোবাসে।
বিজ্ঞাপন
নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি জানিয়ে আজিজার বলেন, কৃষকের অনেক কষ্ট, ধানের দাম কম, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেশি। আমরা ভোট দিতে পারি না। আমার ভোট আরেকজন দেয়। এই যে এখানে এসেছি, সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন অটোরিকশায় করে তিস্তা সেতু পার হচ্ছিলাম, তখন পুলিশ আমাদেরকে জেরা করছে।
তিনি বলেন, সরকার আমাকে পঙ্গুর ভাতা দেয়, তারপরও আমি এই সরকারকে চাই না। এতে সরকার আমার ভাতা সুবিধা বন্ধ কের দিতে পারে। এটা যদি সরকার করে তাতে আমার দুঃখ নেই। বিএনপির জন্য নিজের জীবন দিতে রাজি। জিয়া সরকারের শাসনামল থেকে বিএনপি করি। জিয়াউর রহমান আমার গ্রামে এসেছিল, তখন তাকে দেখে আমার ভালো লেগেছিল। তখন থেকেই আমি ধানের শীষের ভক্ত। আল্লাহ যদি এই সমাবেশে আমার মৃত্যু দেয়, তবুও সমস্যা নাই।
কৃষক আজিজার রহমান উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সেখান থেকে তার সঙ্গে একই এলাকার সিরাজ উদ্দিন সামাদ আলী, মমিনুল, আজাহারসহ আরও অনেকেই এসেছেন। বর্তমানে তারা সবাই সমাবেশস্থলে অবস্থান করছেন।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার। রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির এই সমাবেশের জন্য চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সমাবেশের আগে ধর্মঘটের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবারও আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন রংপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সর্ববৃহৎ জনসমাগম করার টার্গেট নেতা-কর্মীদের।
প্রস্তুতির বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বাধা, ধর্মঘট উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে দলীয় নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। আমরা ধর্মঘট নিয়ে চিন্তিত না। গণসমাবেশে আসার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। বুধবার থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীরা রংপুরে আসতে শুরু করেছেন। গতকাল রাতেও কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক এসেছেন। যত বাধাই আসুক মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হবে। গণসমাবেশে যে জনস্রোত হবে, তা আর আটকানো যাবে না। সমাবেশ যেকোনো মূল্যে সফল করা হবে। আগামীকাল রংপুরে গণজোয়ার বইবে।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সরকারি দলের মূল উদ্দেশ্য সমাবেশে আসা লোকজনকে বাধা দেওয়া। পরিবহন ধর্মঘট কোনোভাবেই নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে পারবে না। পূর্বের সমাবেশগুলোর উপস্থিতিই তার প্রমাণ। মানুষ এই সরকারের পতন চায়। রংপুরের গণসমাবেশই হবে সরকারের পতনের সমাবেশ।
আরএআর