ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাড়ি থেকে বের হতে ও ঢুকতে আর কোনো বাধা নেই

ফেনীর ফুলগাজীতে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার সমাজচ্যুতের ঘটনা তদন্ত করতে ঘটনাস্থল কুতুবপুর পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী বেগম। বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আলোকে প্রতিবেদন তৈরি করতে তিনি ঘটনাস্থলে যান।

এ সময় ইউএনও ফেরদৌসী বেগম কিশোরীর বাবার সাথে কথা বলেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বর্তমানে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না এখন। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মা ও মেয়ে এখন ঢাকায় আছেন।  স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ইউএনও ফেরদৌসী বেগম জানান, আদালতের নির্দেশে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য এসেছি। কিশোরীর পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাঈনুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (২ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ফুলগাজীর মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ায় কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সত্যতা তদন্ত করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুর রহিম জাস্টিস অব দ্য পিস -এর কর্তৃত্ব বলে এই আদেশ জারি করেন।

ওই আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক প্রতিটি নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃত। কথিত সমাজপতি কর্তৃক কাউকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী। এমতাবস্থায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা আছে কি না তা তদন্তপূর্বক আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ফুলগাজী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

ফেনীর আদালতের ফোকাল পার্সন ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন জানান, ফেনীতে জাস্টিস অব দ্য পিস এর কার্যালয় থেকে এটি প্রথম আদেশ। ১ মার্চ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুর রহীম স্বাক্ষরিত আদেশটি ২ মার্চ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার এবং ওসি ফুলগাজীর নিকট প্রেরণ করা হয়।

ফুলগাজী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুতুব উদ্দিন জানান, আমরা আজকেও খবর নিয়েছি। এখন ওই পরিবারের সামাজিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এরপরও কোনো সমস্যা হলে আমাদের তাৎক্ষণিক জানাতে অনুরোধ করে এসেছি।

প্রসঙ্গত, ফুলগাজীতে পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের ১ জুন কৌশলে ওই কিশোরীকে ফেনী শহরের একটি বাসায় নিয়ে যান অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওন। সেখানে জুসের সঙ্গে মাদক সেবন করিয়ে তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন তিনি। একপর্যায় জ্ঞান ফেরার পর ধর্ষণের শিকার কিশোরী প্রতিবাদ করলে তার আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ধর্ষক শাওন। পরবর্তীতে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই কিশোরী কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়। পরে তার স্বজনরা বিষয়টি শাওনকে জানালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং উল্টো হুমকি দেন। এতে বাধ্য হয়ে ওই কিশোরীর মা ২৩ ফেব্রুয়ারি শাওন, তার বাবা আমিনুল ইসলাম, মা শানু ও ফিরোজ আহম্মদ বাবু নামে চারজনের নামে আদালতে মামলা করেন।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ওই কিশোরীর মায়ের দায়ের করা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি একই উপজেলার বশিকপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির কনস্টেবল শাওনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

হোসাইন আরমান/এমএসআর