বোয়ালমারীর মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া সড়কে মাটির পুরু স্তর তুলছেন সওজের কর্মীরা

ফরিদপুরে বিভিন্ন ইটভাটায় পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক থেকে মাটি পড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এছাড়াও হালকা বৃষ্টিতে সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি বিধিমালার তোয়াক্কা না করে ফরিদপুর সদরের টেপাখোলার তাড়াইল সড়ক, ফরিদপুর-সালথা সড়ক, বোয়ালমারীতে মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফরিদপুর-সদরপুর সড়ক, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের তালমার মোড় এলাকায় দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটার মাটি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিপক রায় জানান, জেলায় ১১৯ ইটভাটার মধ্যে ২৫টি অবৈধ; এরমধ্যে চলতি বছরে নবায়ন করা হয়নি ১৪টি। আর ছাড়পত্র নেই ১১টির। 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এই ভাটাগুলোর অধিকাংশই মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত। এসব ইটভাটার মালিকরা বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমি কিংবা বিভিন্ন নদ-নদী থেকে মাটি এনে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। বৃষ্টির পানিতে এসব স্তূপ থেকে মাটি ধুয়ে সড়কের ওপর এসে পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছরই এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল আরোহী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

ফরিদপুরে সড়কের পাশে এভাবেই মাটির স্তূপ করে রেখেছেন ইটভাটার মালিক

ফরিদপুর সদর উপজেলার তাড়াইল সড়কের তালতলা এলাকা থেকে মান্দারতলা স্লুইসগেট পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে বৈধ-অবৈধ ২৯ ইটভাটা। প্রতিদিন পদ্মা নদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য মাটিবোঝাই ট্রাক ওই সড়ক দিয়ে নেওয়া হয়। মাটি নেওয়ার সময় ট্রাক থেকে উপচে সড়কের উপর পড়ে এবং ট্রাকের চাকায় লেগে থাকা মাটি সড়কে লেপ্টে মাটির পুরু স্তর পড়ে আছে। এমন অবস্থা এই সড়কের প্রায় চার কিলোমিটারজুড়ে।

এই পথ দিয়ে চলাচলকারী তরিকুল ইসলাম হিমেল জানান, একদিকে ধুলাবালি অন্যদিকে রাস্তায় মাটির পুরু আস্তরণ। সড়কটি ব্যবহারে এখন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বোয়ালমারীর উপজেলার মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া সড়কের শেখর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত আল আলী অটো ইটভাটার মাটি মহাসড়ক ঘেঁষে রাখা হয়েছে। ওই ভাটায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার মাটির স্তূপ রয়েছে। ট্রাক থেকে মাটি উপচে সড়কের ওপর পড়ে এবং ট্রাকের চাকায় লেগে থাকা মাটি লেপ্টে আল আলী অটো ইটভাটার সামনের উভয় দিকের আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক পুরু আস্তরণ হয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাসানউজ্জামান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও প্রচলিত আইন মেনে ভাটা পরিচালনা করা উচিত। ভাটার মাটি রাস্তায় পড়ে যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে।

ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগী প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ট্রাক থেকে পড়া ভেজা মাটির ফলে সড়কের বিটুমিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সড়ক বিভাগ থেকে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়াও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ভাটা মালিকদের ডেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। ট্রাকে মাটি টানার সময় ঢেকে রাখতে বলেছি। সড়কে পড়ে থাকা মাটি প্রতিদিন অপসারণের জন্য ভাটা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি। কোনো ভাটা মালিক এ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএসআর