সর্বনাশা আগুন সব কাইড়া নিল
দুই সন্তানের সঙ্গে মমতাজ বেগম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মমতাজ বেগম (৩৫) নামে এক নারীর বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে গত ২৩ দিন ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে তার। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে উজানচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছাহের মণ্ডলপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে।
মমতাজ বেগম ওই গ্রামের রিকশাচালক আলমাস শেখের স্ত্রী। আগুনে তার থাকার দুটি ছাপড়া ঘর, একটি রান্না ঘর, চারটি ছাগল, এনজিও থেকে নেয়া ঋণের ৫০ হাজার টাকা, জমির দলিলপত্র, ধান, চাল, স্বামী-স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র, সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ও কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত ২৩ দিন ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে মমতাজ বেগমের বসতবাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে তার বাড়িতে আগুন দেখা যায়। এতে মমতাজ বেগমের বসতঘর রান্নাঘর, গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার পর স্থানীয়রা গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। তবে গ্রামের অপ্রশস্ত রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। এ সময় স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বর্তমানে মমতাজ বেগম ও তার দুই সন্তান প্রতিবেশীদের দেওয়া কাপড় পরে আছেন।
শুক্রবার (০৫ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ শতকের শূন্য ভিটায় দুই সন্তান নিয়ে কান্নাকাটি করছেন মমতাজ বেগম। স্বামী ফরিদপুর শহরে রিকশা চালান। আশপাশের লোকজন যে যা দেন তাই খেয়ে অতি কষ্টে তাদের দিন কাটছে। রাতে পাশের একটি বাড়ির রান্নাঘরে গিয়ে দুই সন্তান নিয়ে ঘুমান মমতাজ বেগম।
বিজ্ঞাপন
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মমতাজ বেগম বলেন, সারাজীবন যে সঞ্চয় করেছিলাম সর্বনাশা আগুন সব কাইড়া নিল। এখন আমি ও আমার পরিবার কোথায় যাব? নতুন করে ঘর তৈরি করার মতো কোনো সম্বল আমার নাই।
তিনি বলেন, ধারদেনা করে বড় মেয়েটারে বিয়ে দিছিলাম। সেই ধারের টাকা এখনও শোধ করবার পারি নাই। প্রায় প্রতিদিনি পাওনাদার বাড়ির পর আসে ধারের টাকা নিতে, দিতে পারি না। এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিছিলাম ধারের টাকা শোধ করার জন্য। কিন্তু তাও হলো না। আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমি পাওনাদারের টাকা ও এনজিওর টাকা শোধ করবো কীভাবে। সব হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। আগুনে বসতবাড়ি হারানোর পর কয়েকজন ইউপি সদস্য ছাড়া কেউ খোঁজ নেয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকিরকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে আমি জেনেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। জেলা প্রশাসন থেকেও সহযোগিতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর