৬৫ ঘণ্টা পর অবশেষে খুলেছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হয়। এসময় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সকল দাবি কেন্দ্রে দ্রুত উপস্থাপন করে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। 

এদিকে, দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হলেও বগুড়ায় ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা।

বিলুপ্তির প্রায় ৯ মাস পর গত সোমবার (৭ নভেম্বর) সজীব সাহাকে সভাপতি ও আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। নতুন কমিটির তালিকা ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে। একপর্যায়ে তারা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রবেশপথের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। 

পরদিন মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ করে এবং নবগঠিত জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তারা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেয়। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা একতরফা কমিটি গঠনে ইন্ধন দেওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। পরে পদবঞ্চিতদের আন্দোলন চলাকালে বুধবার দুপুরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর বরাত দিয়ে বলা হয়, ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর ওই সংগঠনের পদবঞ্চিত কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর এবং অসৌজন্যমূলক শ্লোগান দিচ্ছে যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলানোর ঘটনায় বিস্মিত রাগেবুল আহসান রিপু অবিলম্বে দলীয় কার্যালয়ে তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ত্যাগী এবং পরীক্ষিত। কিন্তু সবাইকে কাঙ্ক্ষিত পদ দেওয়ার সুযোগ নেই।

আজ বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সভা শেষে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এসময় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন ও আসাদুর রহমান দুলু, শিরিন আনোয়ার জার্জিস, সুলতান মাহমুদ খান রনি, মাশরাফি হিরো, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, সোহরাব হোসেন সান্নুসহ সাবেক ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

সাক্ষাৎকালে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন বলেন, আন্দোলরত সকলের দাবি যুক্তিসংগত। কমিটি যে অবৈধ তা আমি স্বীকার করি। যে আন্দোলন করছেন তা সুশৃঙ্খলভাবে করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা যাবে না। আপনারা যে প্রস্তাব রেখেছেন সেসব প্রস্তাব জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করেছেন। আপনাদের আন্দোলন চলবে এবং অব্যাহত থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত অযোগ্য কমিটি বাতিল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে আমি একমত ঘোষণা করছি।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবির সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি। আন্দোলন হবে নিয়মতান্ত্রিক, শিষ্টাচার এবং শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। আমরা আপনাদের সকল দাবি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারির কাছে উপস্থাপন করব। কমিটি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটি যেন দ্রুত নিরসন করা হয় সে ব্যাপারেও আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কথা বলব।

আন্দোলনে থাকা সদ্য ঘোষিত কমিটির সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদ বলেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সাবেক ছাত্রনেতারা আমাদের দাবি পূরণের শর্তে রাজি হয়েছেন। এজন্য শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এই অযোগ্য কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আলমগীর হোসেন/এমজেইউ