আমের বাগানে থোকা থোকা ফুটেছে মুকুল

শীতের তীব্রতার পর আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোয় ফুটেছে আমের মুকুল। মুকুলের সমারোহে বইতে শুরু করেছে পাগল করা ঘ্রাণ। প্রতিটি গাছ থেকে আসছে ম ম গন্ধ। জাতীয় গাছ আমগাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে হলুদ আর সবুজের মহামিলন।

গাছের প্রতিটি ডালপালায় মুকুলে ছেয়ে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ, ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা বাতাস। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করছে, দেখা মিলছে মুকুলের আশপাশে মৌমাছির আনাগোনা।

গত বছর মহামারি করোনার কারণে হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবার আশায় বুক বাঁধছেন এ জেলার আমচাষিরা। অনেকেই মুকুল রক্ষা করতে গাছে গাছে ওষুধ স্প্রে করছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

বাগান-মালিকরা মনে করছেন, এ বছর আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। তবে মুকুল ফোটা দেখে এবার স্বপ্ন দেখছেন গত বছর ব্যাপক লোকসানে পড়া আমচাষিরা।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের আমচাষি মাসুদ আলী বলেন, গত বছর মহামারি করোনার কারণে আমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে না পেরে বাগানেই নষ্ট হয় বিপুল পরিমাণ আম। এমনকি সার, কীটনাশক প্রয়োগ করার খরচ পর্যন্ত ওঠেনি গত বছর।

ফুটেছে আমের মুকুল

এদিকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। আম বাজারজাতকরণে এ বছর প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন আমবাগানে কাজ করা শ্রমিকরা। এখন চলছে বাগান পরিচর্যার কাজ। তাই তারাও আনন্দিত মুকুলের সমারোহ দেখে। শ্রমিক মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর মুকুল দেখে খুব আনন্দ লাগছে। আশা করা যায় ভালো ফলন হবে। মালিক যেমন লাভবান হবেন, আমরাও এ বছর পারিশ্রমিক পাব। সারা বছর অপেক্ষায় থাকি আমের মৌসুমে তিন মাস কাজ করার জন্য। কিন্তু গত বছর কাজ করতে পারিনি।

আমের আড়তদার আব্দুর রাকিব জানান, এখন পর্যন্ত সবকিছুই অনুকূলে রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছে। গত বছর দোকানঘরের ভাড়ার টাকাও আয় করতে পারিনি। আশা করছি এ বছর ফলন যেমন বেশি হবে, তেমনি দামও বেশি পাওয়া যাবে।

ম ম গন্ধ চারদিকে

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, জেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হবে। আমচাষিদের বিভিন্ন সময় পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঠ দিবস, উঠানবৈঠক, সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছত্রাকনাশ-কীটনাশক ব্যবহারে স্প্রের পরিমাণ, ফলন অথবা মটরদানা বাঁধার সময়, মার্বেল আকৃতি হওয়ার সময় তিনবার স্প্রে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গমএইচ এবং হপারের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য। এ ছাড়া আমচাষিদের দুই মাস অন্তর আমগাছের পাশে সার দেওয়ার জন্য উপসহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ