দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। জেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি ধান আমন। কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো। ফলে খুশি কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। হেমন্তের মিষ্টি বাতাসে দোল খাচ্ছে আমনের সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে করে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এই মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে। তবে আমন চাষ করা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে। প্রায় ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩.৩৮ মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ তৎপর থাকায় রোগবালাই নেই বললেই চলে।

সদর উপজেলার শেখপুরা গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা ধান চাষ করেছি।গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার বৃষ্টি না থাকায় এবং সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় আমনে চাষে খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে ধানের বাজার ভালো থাকায় কিছুটা লাভবান হতে পারব।

একই এলাকার কৃষক রমজান আলী বলেন, আমরা প্রতি বছর আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধান বেশি চাষ করি। এ বছর সুগন্ধি ধান লাগিয়েছি তবে পাশাপাশি মোটা জাতের ধান লাগিয়েছি তিন বিঘা জমিতে। এতে আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজারের মতো। এক বিঘায় ফলন হয়েছে ২৫-২৬ মণ করে। ২৪০০ টাকা করে ধানের বস্তা বিক্রি করেছি। তবে ধানের দাম পেয়ে আমরা খুশি হলেও সরকার যদি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমাতো তাহলে আমরা কৃষকরা আরও বেশি খুশি হতাম।

চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের কৃষক হোসাইন আলী বলেন, সার, কীটনাশকের দাম বাড়লেও এবার আামন ধানের পোকার আক্রমণ ছিল না। তাই এবার ধানে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে ২-৩ বার। আর অন্যান্য বার পোকা-মাকড় বেশি হওয়ায় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়ে প্রায় ৫-৬ বার। এবার ধানে পোকা-মাকড় কম হওয়ায় স্প্রে কম করতে হয়েছে ও ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। আমার এক বিঘা জমিতে ২৭-৩০ মণ ধান হয়েছে। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা করে। এক বিঘার জমির ধান বিক্রি করেছি ৩৩ হাজার টাকা। এবার ধানের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আমরা বেশ লাভবান হয়েছি।

ধান ব্যবসায়ী বকুল শাহ বলেন, স্থানীয় বাজারে আগাম জাতের গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা পাঁচ ও মোটা জাতের ধান প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৪৫০ ও চিকন জাতের ৯০ জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪২০০ টাকা বস্তা। তবে শেষের দিকে ধানের দাম আরও বাড়তে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, এ বছর আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম ছিল। এতে কৃষকের সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাঠে খুব ভালো ফলন হয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার দরও ভালো।

ইমরান আলী সোহাগ/এসপি