মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও প্রশাসন কর্তৃক হয়রানি বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে পাবনায় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে বন্ধ রয়েছে জেলার সকল ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন। এমনকি বন্ধ রয়েছে ঢাকা-পাবনার দূরপাল্লার বাসও। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা। এসব যাত্রীদের এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশাই ভরসা। তবে যাত্রীদের এ ক্ষেত্রে গুনতে হচ্ছে তিনগুণ বেশি ভাড়া।

এছাড়াও এই অবৈধ বাহনে মহাসড়কে চলাচলে রয়েছে চরম ঝুঁকি। এদিকে এসব যানবাহন মহাসড়কে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই এসব গাড়ি চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে মহাসড়কে অটোরিকশা দেখলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনার টার্মিনাল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাস না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। আবার অনেকেই কয়েকটি স্থান থেকে যানবাহন পরিবর্তন করে কর্মস্থলে যচ্ছেন। এতে করে যাত্রীদের সময় ও টাকার অপচয় হচ্ছে।

যাত্রীরা জানান, পাবনা থেকে কাজিরহাটের বাস ভাড়া ৯০ টাকা হলেও অটোরিকশায় ১৬০/১৭০ টাকা করে যেতে হচ্ছে। টার্মিনাল থেকে কাশিনাথপুরের ভাড়া ৬০ টাকা হলেও গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকা। ঈশ্বরদীর ভাড়া ৩৫ টাকা হলেও ৮০ টাকা দিতে হয়েছে। চাটমোহরের ভাড়া ৪০ টাকা হলেও ১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এভাবে ভেঙে ভেঙে ঢাকা যেতে ১৭০০ টাকা লাগবে। যেখানে ঢাকা যেতে ৫০০ টাকায় হয়ে যেত।

শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় কথা হয় মোনায়েম হোসেন নামের বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীপথে কাজিরহাট হয়ে ঢাকা যেতে হবে। সেজন্য টার্মিনালে এসেছি। এখন দেখি বাস ধর্মঘট। কোনো উপায় না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে যাচ্ছি। যেখানে কাজিরহাটের ভাড়া ১০০ টাকা দিয়ে যেতে হতো সেখানে ১৬০/১৭০ করে যেতে হচ্ছে।

এসময় কথা হয় মুনজিল হোসেন নামের আরেক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার আম্মা গত পরশুদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বাড়িতে এসেছি টাকা নেওয়ার জন্য। আজ সকালে টার্মিনালে এসে দেখি কোনো বাস চলছে না। বাধ্য হয়েই নদীপথে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওয়ানা দিয়েছি। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। যাওয়ার পথে শুনি পরিবহন ধর্মঘট। বাধ্য হয়েই সিএনজিতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।  যেতে অনেক সময় লাগবে। এছাড়া রাস্তায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আলতাব হোসেন বলেন, বাস ধর্মঘট হওয়ায় অটোরিকশায় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দেখা দিয়েছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে আগের ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। মহাসড়কে অবৈধভাবে চলার বিষয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে অটোরিকশা কিনেছি। কিস্তি দিতে হবে। পরিবার নিয়ে চলতেও হবে।

অটোরিকশাচালকদের স্টেশন মাস্টার আকাল হোসেন বলেন, এখানে যাত্রীদের সহনীয় ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিলে নিষেধ করা হচ্ছে।

মাধপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে ধর্মঘট দেখে গ্রামগঞ্জের সব অটোরিকশা মহাসড়কে উঠে আসছে। আমাদের জনবল কম হওয়ায় একদিকে অভিযান করলে আরেকদিক থেকে উঠে আসতেছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ওরাতো সবই অবৈধ। তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া আরও অন্যায়।

পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার রেইনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজখবর নিচ্ছি। অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রাকিব হাসনাত/এমজেইউ