শীতের শুরুতেই এবার পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে ঢল নেমেছে বেদেশি পর্যটকদের। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজেগুলোতে পর্যটকদের ভিড় ছিলে চোখে পড়ার মতো। 

তাদের মধ্যে একজন পর্যটক স্টিপান। জার্মান থেকে বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশ ঘুরে দেখে কাতারের বিশ্বকাপ দেখে নিজ দেশ জার্মানিতে ফিরবেন স্টিপান।

স্টিপান বলেন, দশ মাস ধরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছি। বাংলাদেশে এক সাপ্তাহের বেশি সময় ধরে আছি। পুরান ঢাকার ব্যস্ততম মার্কেটগুলো আমার কাছে ভিন্ন রকম লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বরিশালের নৌকার মধ্যে ভাসমান বাজারটাকে। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখেছি। ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর কালচারগুলো বেশ উপভোগ করেছি। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষদের ভালো লেগেছে। মানুষগুলো বেশি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। সবাই স্বেচ্ছায় এসে কথা বলেন। বাংলাদেশ থেকে কাতারে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলা দেখব। এরপর দেশে ফিরব।

স্টিপান এর মতো এমন আরও অনেক পর্যটক এসেছেন দেশের বাইরে থেকে। প্রাকৃতিক সবুজ বন, হাওর ও পাহাড়ি টিলার বৈচিত্র্যময় পরিবেশের কারণে পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। মনকাড়া সবুজ বন-বনানী উঁচু নিচু পাহাড় টিলার ভাঁজে ভাঁজে আছে সৌন্দর্যের হাতছানি। বিশেষ করে পাঁচতারা কয়েকটি হোটেল আর রিসোর্ট গড়ে উঠায় বিদেশিদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম মৌলভীবাজার জেলা। 

শ্রীমঙ্গলের গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জিএম আরমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। আমাদের রিসোর্টে সারা বছরই বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে। শীতে যেমন পর্যটকরা আসেন বর্ষার মৌসুমেও শ্রীমঙ্গলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকরা আসেন।

শীতকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই অমিত সম্ভাবনার ভূমি প্রতিনিয়ত পর্যটকদের হাতছানি দেয়। শুধুমাত্র বাগানই নয়, আরও জনপ্রিয় কিছু স্থান এখন পছন্দের শীর্ষে। রয়েছে বাইক্কা বিল, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পাথারিয়া পাহাড় ও  মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। 

শ্রীমঙ্গলের চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ‘চামুজ্ঞ’ এর ম্যানেজার শংকর চত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত তিন দিনে এখানে শতাধিক বিদেশি নারী পুরুষ খাওয়া দাওয়া করেছেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী ইকো কটেজে ও রিসোর্টগুলোতে অনেক বিদেশি পর্যটক ছিলেন। আমাদের এখানে ব্যালজিয়াম, ফ্রান্স, আমেরিকা, চায়না, কানাডা, অস্টেলিয়া, ইতালি ও জার্মান থেকে এসব পর্যটক এসেছেন। 

মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী সামছুর রহমান বলেন, এবার শীতের শুরুতেই বিদেশি পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বিগত বছরগুলোতে পর্যটক আসা বন্ধ ছিল। অনেক কটেজ বন্ধ ছিল। রির্সোটের ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়েছিল। এবার বিদেশিদের আনাগোনায় রির্সোট কটেজ ব্যবসায় আশার প্রদীপ জ্বলেছে। 

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বিদেশি পর্যটকদের আগমন যাতে আরও বাড়ানো যায় এজন্য আমরা কাজ করছি। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

ওমর ফারুক নাঈম/এমএএস