শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম ঘাগড়া কুনাপাড়া বধ্যভূমিটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কয়ারি রোড় এলাকা থেকে ৫০০ মিটার কাঁচা রাস্তা পেরোলেই এই বধ্যভূমি।

নাম না জানা শত শত শহীদের স্মরণে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় বধ্যভূমিটি অযত্নে পড়ে আছে। কোনো নামফলক নেই। ফলে এলাকাবাসী ছাড়া নতুন কেউ বুঝতেই পারবে না ঐতিহাসিক বধ্যভূমি এটি। জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী কয়ারি রোড় এলাকায় জেলার সবচেয়ে বড় ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। ক্যাম্পের পাশেই ছিল টর্চার সেল। যুদ্ধের সময় মানুষের চিৎকার এখান থেকে ভেসে আসত। ক্যাম্পের ৫০০ মিটার পশ্চিম পাশে ১০ শতাংশ জমিজুড়ে গভীর গর্ত ছিল। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী অসংখ্য মানুষকে ধরে এই ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করে মেরে ফেলত। পরে এই গর্তে মরদেহ ফেলে দিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গ্রামবাসী এলাকায় ফিরে আসেন। তখন বড় গর্তটিতে অসংখ্য মরদেহ দেখতে পান তারা। গ্রামবাসী মিলে মরদেহগুলো মাটিচাপা দেন।

২০০৮ সালে সেনাবাহিনী ১২ শতাংশ এই বধ্যভূমির জমি অধিগ্রহণ করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। পাকিস্তানি ক্যাম্পের জায়গায় হাতীবান্দা ইউনিয়ন পরিষদ নির্মাণ করা হয়েছে। চারপাশে নীরবতা। কোলাহলমুক্ত গ্রামের বাঁশঝাড়ের নিচে শত শত শহীদের গণকবর, অথচ কোনো নামফলক নেই। কাছে গিয়ে কেউ না দেখিয়ে দিলে জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি সম্পর্কে বুঝা যাবে না। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ১০ শতাংশের স্তম্ভের বেদীটি অযত্নে পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাব্বি মিয়া বলেন, আমাদের এই বাঁশঝাড়ের নিচে অসংখ্য মানুষের মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছে। এই জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার পর থেকে অযত্নের ফলে স্মৃতিস্তম্ভে শেওলা পড়ে গেছে। দেখে চেনা খুব কষ্টকর। আমরা চাই স্মৃতিস্তম্ভটি সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ্জামান আকন্দ স্মৃতিস্তম্ভটি সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার দাবি জানান।

জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হিরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যাদের জীবনের ফলে এ স্বাধীন দেশ পেয়েছি তাদের স্মৃতিটুকু যেন সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয় এটাই আমাদের দাবি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের জন্য আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্ম যেন এই বধ্যভূমির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এমজেইউ