বাউলসংগীতে মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা
গান পরিবেশন করছেন বাউলশিল্পী ও লোককবি আব্দুস সালাম সরকার
বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁর জন্মভূমি নেত্রকোনায় রাতভর গানের আসরে মুগ্ধ হয়েছেন কয়েক সহস্রাধিক দর্শক-শ্রোতা। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাত ১১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের বেজগাতী গ্রামে এ বাউল গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
বেজগাতী যুব সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত ওই আসরে গান পরিবেশন করেন দেশ বরেণ্য বাউলশিল্পী ও লোককবি আব্দুস সালাম সরকার এবং বাউলশিল্পী আনোয়ার সরকার।
বিজ্ঞাপন
এই দুই বাউলের একের পর এক গানের ফাঁকে ফাঁকে দুজনের মধ্যে চলে নানা রকম যুক্তিতর্ক। আসরের শুরুতেই সৃষ্টিকর্তার গুণকীর্তন করে দুই বাউলশিল্পীই বন্দনা গান করেন। পরে রাসুল (সা.)-এর শান ও মুর্শিদিসহ পর্যায়ক্রমে চলে বিচ্ছেদ গান। মঞ্চে থাকা দুই বাউলের গান ও কথার লড়াই দারুণভাবে উপভোগ করেন চারপাশে থাকা দর্শক-শ্রোতারাও।
ওই দুই গুণী শিল্পীর গানের লড়াইয়ের মাঝে মাঝে চমৎকার বাউলসংগীত পরিবেশন করেন বেজগাতী গ্রামের ক্ষুদে বাউলশিল্পী হৃদয় সরকারও। শিল্পী হৃদয়ের গানেও আত্মতৃপ্তি পান উপস্থিত শ্রোতারা।
বিজ্ঞাপন
বাউলের আসরে গান শুনতে আসা স্থানীয় জালালপুর গ্রামের যুবক আরিফ মিয়া বলেন, ‘এ রকম গানের আসর বর্তমানে আর তেমন একটা হয় না। আগে হতো বলে মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি। বেশ গুরুত্বপূর্ণ গান ও আলোচনা হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে। এসব গানের আসরে বাউলের গান ও যুক্তিতর্ক থেকে শেখার মতো অনেক কিছুই আছে।’
বেজগাতী যুব সমাজের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, ‘আমাদের অঞ্চলে প্রয়াত বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ, ঈসরাইল মিয়া, আবেদ আলী, বাউল আব্দুস সালাম সরকার এবং দেশ বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী কুদ্দুস বয়াতীসহ অসংখ্য শিল্পীর জন্ম হয়েছে। আমরা আমাদের লোকসংস্কৃতির মূলধারা বিলুপ্ত প্রায় বাউল গানকে টিকিয়ে রাখতে প্রথমবারের মতো এ বাউলসংগীতের আয়োজন করেছি।’
বাউলশিল্পী আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘বাউলসংগীতের নামে সারাদেশে বর্তমানে অপসংস্কৃতি চলছে। যে বাউল গান এক সময় মানুষ রাতব্যাপী উপভোগ করত। বাউল নামধারী কিছু শিল্পীর কারণে তা আজ বিলুপ্ত প্রায়। তবে নেত্রকোনা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো মূলধারার বাউল গান টিকে রয়েছে।’
মূলধারার বাউলসংগীতের এ আয়োজন করায় এই শিল্পী বেজগাতী যুব সমাজকে অভিনন্দন জানান এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান।
জিয়াউর রহমান/এমএসআর