৩ দিন না খেয়ে থাকার পর শুরু করি জুতা সেলাই
সুবিন
চরাঞ্চলের ছোট্ট একটি বাজার। নাম ডিগ্রিরচর সকাল বাজার। এ বাজারের এক কোণে সুবিন (৪৫) নামে এক নারী জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ করেন। কখনও কখনও এলাকায় ঘুরে ঘুরেও করেন এ কাজ। এভাবেই কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে চলছে মা-মেয়ের সংসার। সুবিন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রবিদাসের মেয়ে।
কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ডিগ্রিরচর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল মাদারগঞ্জের সুবিনের। স্বামী সাজনা ছিলেন চরপুটিমারি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় এক মেয়ে রেখে মারা যান সাজনা। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র থাকার ঘরটি বিক্রি করে দেয় সতীনের ছেলে। এতে ভিটেহারা হয়ে পড়েন সুবিন।
বিজ্ঞাপন
একমাত্র শিশু মেয়েকে নিয়ে একটু আশ্রয়ের খোঁজে এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরতে থাকেন। অবশেষে ঠাঁই হয় প্রতিবেশীর এক রান্না ঘরে। এভাবেই তিন দিন না খেয়ে থাকার পর বেঁচে থাকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশাকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নেন। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় করেন। তা দিয়েই চলছে মা-মেয়ের জীবন সংগ্রাম।
এ ব্যাপারে সুবিন বলেন, আমার জীবনে আর কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। আমি যা পাওয়ার তা পেয়েছি। যা হারাবার তা হারিয়েছি। আমার বেঁচে থাকার কারণ শুধু মেয়েটা। বাবার মৃত্যুর পর শোকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর পড়াশোনা হয়নি তার। সে এখন বড় হয়েছে। তার বিয়ে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এখানেও বিধি বাম। আমি যা আয় করি তা দিয়ে কোনো রকমে ডাল ভাত জোটে। বিয়ের কথা বলতে গেলেই লাখ টাকার যৌতুক চাই। আমার পক্ষে লাখ টাকা তো দূরের কথা হাজার টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। নেই একটি নিজের ঘর। তাই ভয়ে ভয়ে কাটে আমার দিন-রাত। ভয়ে থাকি আমার মতো যেন না হয় মেয়ের জীবন!
এসপি