কাফনের কাপড় পরে নেমেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব
কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা
প্রতারণার প্রতিবাদ ও মাইগ্রেশনের দাবিতে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রায় তিন ঘণ্টা সড়কে বসে শুয়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের চার কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১০ মার্চ) দুপুর সোয়া ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ মোড় সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। মাইগ্রেশনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে অন্যত্র মাইগ্রেশনের দাবিতে টানা ৩২ দিন আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কেউ এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন নেই কলেজটির। হাসপাতাল এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষাজীবনের কথা বিবেচনায় কোনো শর্ত ছাড়াই মূল কাগজপত্র প্রদানসহ অন্য মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
বিএমডিসি কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহাইব মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, মাইগ্রেশনের দাবিতে আমরা রাজধানীতে গিয়ে মানববন্ধন ও রংপুরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা অনিশ্চিত শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত। সমস্যা সমাধানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সড়কে কাফনের কাপড় পরে শুয়ে থাকা কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাইমিন আহমেদ ইমন বলেন, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে নেপাল থেকে আসা ৪০ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য হাসপাতালে কোনো শিক্ষক নেই। বিএমডিসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেই। এরপরও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছেন। কর্তৃপক্ষ বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরও অনুমোদন আনতে পারেনি। ধার করা শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করেছে তারা।
দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছ থেকে নর্দান কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ সমস্যা নিরসনে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের সঙ্গে ভারত ও নেপালের ৫৫ শিক্ষার্থীও রয়েছেন। অনেকেই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। যাদের এমবিবিএস শেষ হয়েছে এক বছর হলো। কিন্তু ইন্টার্ন করতে পারছেন না। ইন্টার্ন ছাড়া মেডিকেলের পড়ালেখা শেষ হয় না। এ সমস্যা নিরসনে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছি। আজ কাফনের কাপড় জড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব আমরা।
এদিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের মেডিকেল মোড়ে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থানের কারণে নগরজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় চার কিলোমিলাটারজুড়ে যানবহন আটকা পড়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রায় তিন ঘণ্টা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের পর মাইগ্রেশনের দাবি আদায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর কবির বলেন, বুধবারের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করাসহ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ফেরার প্রসঙ্গ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসবে। সেখানকার অবস্থা ও কার্যক্রম দেখে আমরা পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেব।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আলতাফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মাইগ্রেশেনের প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় আলোচনা হচ্ছে। আপাতত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়েছেন। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম