কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নিখোঁজ শিশু রবিউল/ সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ১২ বছর বয়সী শিশু রবিউল ইসলাম ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিখোঁজ হয়। প্রায় ২ বছর (২২ মাস) হতে চললেও ছেলেটির খোঁজ মেলেনি এখনো। স্থানীয় পুলিশও দিতে পারছে না কোনো আশা। রবিউলের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন বাবা-মা।

শিশু রবিউল ইসলাম কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম টুনকু ও রাশিদা বেগমের ২য় ছেলে। নিখোঁজ হওয়ার সময় সে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিখোঁজ হয় রবিউল। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা আশপাশের গ্রামে এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। পরে ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রবিউলের বাবা।

ঘটনার পাঁচ মাস পর রবিউলের বাবা তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযুক্তরা হলো, কচাকাটা থানার সুবারকুটি গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন, একই এলাকার রেজাউল করিম, রবিউলদের গ্রামের হাসান মিয়া ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগম। 

অভিযোগে রবিউলের বাবা উল্লেখ করেন, গ্রামের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাখাওয়াত ও রেজাউল করিম কিছু ছাত্রকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দিতেন। তারা রবিউলসহ বেশ কয়েকজনকে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান। এর কিছুদিন পরই রবিউল নিখোঁজ হয়। রবিউল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দেন রেজাউল ও সাখাওয়াত। বন্ধ হয়ে যায় তাদের কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম।

রবিউলকে রেজাউল ও সাখাওয়াত সঙ্গে নিয়ে গেছেন এবং হাসান আলী ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগম রবিউল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

সন্তানকে ফিরে পেতে দিনরাত নানা জায়গায় ছুটছেন কৃষক বাবা তৌহিদুল ইসলাম। এতদিনেও ছেলে ফিরে না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। আছে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগও।

তিনি বলেন, 'আমার সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর ফুলবাড়ী থানায় প্রথমে ডায়েরি করি, পরে চারজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিই। প্রায় ২ বছর কেটে গেল, ছেলের সন্ধান পেলাম না। এদিকে ওর মা ছেলের শোকে কাতর। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করে না। সারাক্ষণ ছেলের নাম ধরে বিলাপ করে। তার আহাজারি আর সহ্য হয় না। আমাদের ছেলেটা কোথায় আছে, কেমন আছে?'- বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, কতদিন যে ছেলের সন্ধান চাইতে থানায় গিয়েছি হিসাব নেই। আমি খুব গরিব মানুষ, তাই থানা-পুলিশ আমাকে পাত্তা দেয় না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমার ছেলে আমাকে একদিন ফোন করে বলবে, ‘আমি এখানে আছি আব্বা’- এই আশায় বুক বেঁধে আছি।

রবিউল নিখোঁজের ঘটনায় করা অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ফুলবাড়ী থানার উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম বলেন, নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধারে সীমান্তবর্তী থানাসহ দেশের সব পুলিশ স্টেশনে তথ্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পিবিআই ও গোয়েন্দা সংস্থাকে শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানানো হয়েছে। তাকে উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। 

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান বলেন, আমি ২০ মাস আগে এখানে ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বলতে পারব।

মো. জুয়েল রানা/জেএস