গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। রোববার (১৫ জানুয়ারি) মোনাজাত শেষে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা বাড়ি ফেরার সময় পরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পরছেন।

মোনাজাতের পরপরই ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-পুবাইল, টঙ্গী-বনমালা আঞ্চলিক সড়ক, টঙ্গী-আব্দুল্লাহ্পুর সড়কে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। দুই একটি পিক আপ ও মোটরসাইকেল ছাড়া মুসল্লিরা নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা দিয়েছেন।

পুরান ঢাকা থেকে রোববার সকালে আখেরি মোনাজাতের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, হেঁটে, অটোরিকশা ইজতেমা মাঠে আসলেও ফিরতে হাঁটাই একমাত্র ভরসা। তাই জোট বেধে জিকিরে ইজতেমা এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছি।

নরসিংদির আকরাম হোসেন একই কথা জানিয়ে বলেন, ভেঙে ভেঙে ইজতেমা মাঠে এসেছেন, কিন্তু ফিরতে হচ্ছে হেঁটে, অতিরিক্ত ভাড়ায়ও যান পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কষ্ট হলেও আনন্দ আছে।

রোববার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গীর কামারপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় মুসল্লিদের ঢল নামে। ৯টা ৫৫ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তা স্থায়ী থাকে। এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের সুরা সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় নেতা মাওলানা ক্কারী মো. জোবায়ের হাসান।

মোনাজাতের পরপরই আখেরি মোনাজাতের উদ্দেশ্যে আসা মুসল্লিরা ইজতেমা এলাকা ছাড়ছেন। তবে খিত্তায় অবস্থান নেওয়া মুসল্লিরা পর্যায়ক্রমে ময়দান ছাড়বেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগামীকাল পর্যন্ত ময়দানে অবস্থান করবেন।

আখেরি মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মার সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় দুহাত তুলে মহান আল্লাহ’র দরবারে ফরিয়াদ জানায় লাখ লাখ মুসল্লি। 

এর আগে হেদায়তী বয়ান করা হয়। ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমানের হেদায়তী বয়ানের পর পরই শুরু করা হয় আখেরি মোনাজাত।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই ইজতেমাস্থল টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। রোববার সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শীত-ধুলাবালি উপেক্ষা করে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কার, ট্যাক্সি ও অন্যান্য যানবাহন রেখে হেঁটেই মুসল্লিরা ছুটে যান ময়দানের দিকে।

মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিমান বন্দর থেকে বোর্ডবাজার-গাজীপুরা-টঙ্গী-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন সড়ক মুসল্লিতে একাকার হয়ে যায়। যে দিকেই চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবী-টুপি পড়া মানুষ আর মানুষ। ইজতেমা মাঠ বিস্তৃত হয়ে পড়ে গোটা মহাসড়ক, অলিগলি থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরের ছাদ সর্বত্র ছিল মুসল্লি।

মোনাজাতে অংশ নিতে অনেকে ইজতেমার মূল ময়দানে ঢুকতে না পেরে পত্রিকা, পাটি, চট, জায়নামাজ, পলিথিন বিছিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন মুসুল্লিরা। অনেকেই আবার মোবাইল ফোনে দূর-দূরান্ত থেকে মোনাজাতে শরিক হন।

শিহাব খান/আরকে