যাকে নিয়ে গল্প তার আঁকা ছবি

গল্প তো অনেকেরই শুনি। আজ এক অন্যরকম গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ‘অচেনা নারীর গল্প’। যিনি নিজের অজান্তে একজন প্রগতিশীল নারী। সবার মাঝে নিজেকে হাসি খুশি রাখেন। তবে তার মনে অনেক কষ্ট। গল্প বললেও নাম বলা যাবে না। কারণ তিনি অচেনা নারী।

মাধ্যমিকের গণ্ডি শেষ না হতেই তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। অচেনা মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধতে হয়েছে। সংসারের বেড়াজালে অচেনা মানুষটি এখন তার সবচেয়ে বড় শক্তি। অচেনা মানুষটি তাকে সবসময় আগলে রাখেন। এজন্য মাধ্যমিকে বিয়ে হলেও ওই নারী মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন। সংসারে সবার প্রিয় তিনি।

একজন নারীকে মা-বাবার সংসার থেকে গিয়ে অন্যের বাড়ির বউয়ের দায়িত্ব নিতে হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি তাকে মেয়ের মতো আগলে না রাখে তাহলে পদে পদে বিপদ। তবু শ্বশুরবাড়িতে নিজের স্থান করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া জরুরি। বুদ্ধিমত্তা দিয়েই শ্বশুরবাড়িতে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন ওই নারী। যদিও এখনো নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। তবু মানিয়ে নিয়েছেন। 

সংসার সামলে ওই নারী পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। দুর্দান্ত মেধাশক্তি দিয়ে উপার্জনেরও পথ বেছে নিয়েছেন। তবে উপার্জন তার সংসার চালানোর জন্য নয়। এটি তার স্বপ্ন। বিয়ের পর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই তিনি এগিয়ে চলেছেন। স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বেশি অবদান যার সঙ্গে এই নারীর বিয়ে হয়েছে তার। 

অচেনা এই নারী নিজের সব কাজ একা একা করতে পছন্দ করেন। পারলে অন্যের আবদারেও সহযোগিতা করেন। কখনো কোনো কাজে কাউকে না করেন না। বিয়ের ১০-১২ বছর পরও তার মেধায় রয়েছে শৈল্পিক ছোঁয়া। যা তিনি একবার দেখেন, তা সহজেই মনে ধারণ করে নিতে পারেন। পরে মনে আঁকা ছবিটি পেন্সিলের মাথায় ফুটিয়ে তোলেন আর্ট পেপারে। দেখে কেউ অনুমান করতে পারবে না যে, এটি কোনো পেশাদার শিল্পীর আঁকা নয়।

তার শৈল্পিক মেধার বিকাশ তিনি করতে না চাইলেও পরিচিতরা ছবি এঁকে দেওয়ার আবদার করেন। ওই যে প্রথমেই বললাম, এসব কাজে আবদার রক্ষা করতে পিছপা হন না। ঠিক একই রকম ছবি এঁকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার আঁকা ছবির সঙ্গে অমিল খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।

অচেনা নারীর আঁকা ছবি

তবে তার বাইরের পৃথিবীটা সুখের ও সুন্দর হলেও হৃদয়টা কষ্টে ভরা। কারও সঙ্গে সে কষ্ট ভাগও করতে রাজি নন। স্বপ্ন পূরণে যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি কাছে পেয়েছেন তার সঙ্গেও না। স্বামী ব্যবসায়িক কারণে এলাকার বাইরে থাকলেও স্ত্রীর জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা কমেনি। স্ত্রীর ভালোবাসাও অনুরূপ। সন্তানদের ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছেন। অমায়কি ব্যবহার তার ফুটফুটে শিশুদের। পড়াশোনায়ও ভালো। সন্তানদের তিনি চিত্রাঙ্কন শিখাচ্ছেন। নিজের স্বপ্নগুলো মাটি চাপা পড়লেও সন্তানরা যেন সে পরিস্থিতির শিকার না হয়, সেভাবেই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর মধ্যে আরেকটি গল্প আছে, শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওই নারী তার জা’কে নিজের বোনের মতো পেয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ওই বোন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন। জা’কে হারিয়ে আবারও সবার মাঝে তিনি একা। তবে জা’র সন্তানদের নিজের সন্তানদের মতো করে ভালোবাসতে শুরু করেন। জা’র ছেলেকে নিজের বড় ছেলে হিসেবেও মনে জায়গা দিয়েছেন। ওই ছেলেটি তার সকল কাজের সঙ্গীও বলা চলে। যেসব কাজে তিনি অবাধ্য, সেসব কাজ ওই ছেলের ভালোবাসার কাছে হার মানে। 

ওই নারী বলেন, সবার সুখের মাঝেই আমি সুখ খুঁজি। আমার ব্যক্তিগত দুঃখ কাউকে দেখিয়ে অন্যকে চিন্তায় ফেলতে চাই না। এজন্য সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। কারও উপকার করতে পারলে মনটা আনন্দে ভরে যায়।

সম্প্রতি ফেসবুকে ওই নারীর হাতে আঁকা ছবি দেখে প্রতিবেদক যোগাযোগের চেষ্টা করেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথাও হয়। তার অন্য এক বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলে বিষয়গুলো জানা যায়। 

তবে সংবাদ মাধ্যমে আসা নিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তার আঁকা ছবি নিয়ে তার সংক্ষিপ্ত জীবনের গল্প তুলে ধরা যেতে পারে বলে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।

এএম