রাজবাড়ী থেকে ২১৫২ যাত্রী নিয়ে ভারতে গেল ওরশ স্পেশাল ট্রেন
ভারতের মেদিনীপুর জোড়া মসজিদে ১২২তম পবিত্র ওরশ শরিফ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া রাজবাড়ীর উদ্যোগে ২৪টি বগিতে ২ হাজার ১৫২ জন ওরশ যাত্রী নিয়ে স্পেশাল ট্রেন ভারতের মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
এ সময় ট্রেন যাত্রীদের বিদায় জানান সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী। আরও উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান,পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতুসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দোয়া ও মোনাজাতের পর যাত্রা শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ২৪টি কোচের বিশাল ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে সারাদিন অবস্থান করে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে সাজানো হয় ইঞ্জিনসহ ট্রেনটির সকল বগি। ট্রেনটি দেখতে এবং যাত্রীদের বিদায় জানাতে হাজারো মানুষের আগমন ঘটে। বেলা ১১টার দিকে ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলস্টেশন এলাকায় আসে। এরপর ট্রেনটি সাজানো হয়। এরপর বিকেলে ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলস্টেশনের ৩নং প্ল্যাটফর্মে আনা হয়। ট্রেনটি একনজর দেখতে বিকেল থেকেই রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সর্বস্তরের মানুষ ভিড় করতে থাকে। কেউ কেউ পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনকে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে আসেন। এ সময় তাদের একে অপরের কাছ থেকে দোয়া নিতে দেখা যায়।
জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ৩২তম ও বড় পীর গাউসুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর ১৯তম অধস্তন বংশধর আলী আব্দুল কাদের সামশুল কাদের হযরত সৈয়দ শাহ মোর্শেদ আলী আল কাদেরী আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী (রহ.) এর মশহুর নাম ‘মওলাপাক’ এর ১২২তম বার্ষিক পবিত্র ওরশ শরিফ আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দিবাগত রাতে মেদিনীপুর জোড়া মসজিদে উদযাপিত হবে।
বিজ্ঞাপন
উক্ত ওরশ শরিফ পরিচালনা করবেন রাসুলে পাক (সা.) এর ৩৬তম ও বড় পীর গাউসুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর ২৩তম অধস্তন আওলাদ পাক জিল্লেইলাহী, বেলায়েতের রবি, গাউসে জামান লাখো ভক্তের আকা ও কেবলা কাদেরীয়া তরিকার সাজ্জাদানশীন হুজুরপাক হযরত সৈয়দ শাহ্ ইয়া সুব আলী আল কাদেরী আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
রাজবাড়ীর আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ কাদেরী খোকন জানান, ১২২তম বার্ষিক পবিত্র ওরশ শরিফ উপলক্ষে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে ২৪টি বগি সম্বলিত মেদিনীপুর ওরশ স্পেশাল ট্রেন ১২৪৫ জন পুরুষ, ৮৩২ জন নারী, ৭৫ জন শিশুসহ (বালক-৪৭ বালিকা-২৮) মোট ২১৫২ জন ওরশ যাত্রী নিয়ে আজ রাত ১০টায় লিডার আলহাজ মো. মাহবুব-উল-আলম দুলালের নেতৃত্বে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ওরশ শরিফ শেষে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি আবার রাজবাড়ী ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় এই ওরশ উৎসবকে নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক এই ট্রেনটি দুই দেশের সেতু বন্ধন এবং সব ধর্মের প্রতি একে অপরের সমান শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে।
লক্ষ্মীকোল এলাকার আব্দুল লতিফ নামে এক যাত্রী বলেন, আমি প্রতি বছরই চেষ্টা করি মেদিনীপুরের ওরশে যাওয়ার। করোনার কারণে গত দুই বছর যেতে পারিনি। তাই এ বছর যাচ্ছি।
ট্রেন দেখতে আসা রাজিব শেখ,কাজী শফিকুল ইসলাম, মিরাজুল ইসলাম,তৌফিক,উজ্জ্বলসহ একাধিক দর্শনার্থী বলেন, ওরশে তো যেতে পারলাম না। তাই ট্রেন টিকে দেখতে এসেছি। যারা ওরশে যাচ্ছে তাদের অনেকের কাছ থেকে দোয়া নিলাম। এতো বড় বগি সম্বলিত ট্রেন আগে কখনো দেখিনি।
রাজবাড়ী রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনে ট্রেনটি আসে। সারাদিন ট্রেনটি সাজানোর পর রাত ১০টা ১১ মিনিটে ছেড়ে যায়। রাজবাড়ী থেকে দর্শনা পর্যন্ত জিআরপি পুলিশ টিম স্পেশাল গার্ডে নিয়োজিত থাকবে।
উল্লেখ্য,বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। তবে করোনার কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে ওরশ স্পেশাল ট্রেন যায়নি। ভারতের মেদিনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে রাজবাড়ীর বড় মসজিদে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর