রংপুরের কাউনিয়ায় শিশুদের টিকাদানের পর টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল মবিন নামের এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে। ওই স্বাস্থ্য সহকারী টিকা কার্ডের সংকট সৃষ্টি করে শিশুর অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন বলে জানা গেছে।

এদিকে শিশুদের টিকাদানের পর টিকা কার্ড না পাওয়ায় জন্মনিবন্ধন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নবজাতকের অভিভাবকদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রশিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। এজন্য মাসে ৪৬৫টি নতুন টিকা কার্ডের প্রয়োজন হয়। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে স্বাস্থ্য সহকারীদের ইপিআই টিকা কার্ড সরবররাহ করা হয়। যেকোনো শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়া পর্যন্ত দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই-এর (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) হলুদ রংয়ের টিকা কার্ড যা টিকাকেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়। প্রত্যেক শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য এই কার্ড অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কাউনিয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত টিকা কার্ড সরবরাহ রয়েছে। এরপরও শিশুদের টিকাদানের পর টিকা কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত টিকা কার্ড সরবরাহ থাকলেও উপজেলায় গত ছয় থেকে আট মাসে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশুর টিকাদানের পর মিলছে না টিকা কার্ড।

হারাগাছ পৌর এলাকার সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিমি জানান, তার মেয়ের বয়স দুই মাস। একই এলাকার ইসলামের বাড়িতে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইপিআই কেন্দ্রে তার শিশুর তৃতীয় টিকা দেওয়া হয়। টিকাদানের পর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল মবিন তাকে বলেন, টিকা কার্ডের সরবরাহ নেই। কার্ড নিতে হলে একশ টাকা দিতে হবে। পরে তিনি স্বাস্থ্য সহকারীকে টাকা দিয়ে টিকা কার্ড নেন। 

ওই এলাকার বাসিন্দা আসমানী বেগম বলেন, আমার শিশুর বয়স তিন মাস। একই এলাকার ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পায়নি আমি। তাই সন্তানের এখনও জন্মনিবন্ধন করাতে পারিনি।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন নবজাতকের অভিভাবকের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের কথা হয়। রাজিব গ্রামের পারভীন আকতার জানান, তার শিশুর বয়স দুই মাস। রাজিব এলাকায় ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। টিকা কার্ড নাকি টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে জানিয়েছেন ইপিআই কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা।

বিনোদমাঝি গ্রামের ইসমি আরা বলেন, আমার শিশুর বয়স আট মাস। ইপিআই টিকাদানের পর আমাকে টিকা কার্ড দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য সহকারীরা জানিয়েছে, টিকা কার্ড সরবরাহ নেই তাই সাদা কাগজে পরবর্তী সময়ে টিকাদানের তারিখ লিখে দিয়েছে।

শহীদবাগ বল্লভবিষু গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা রানী বলেন, আমার শিশুর চারটি টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাইনি এখনো। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইপিআই টিকা কার্ড ছাড়া শিশুর জন্মনিবন্ধন হচ্ছে না।

এদিকে নবজাতক শিশুর অভিভাবকদের ভাষ্য, টিকা কার্ড সব শিশুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাই তারা শিশুদের দেওয়া ইপিআই টিকার কার্ড দ্রুত বিতরণের দাবি জানান।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন বলেন, ইপিআই টিকা কার্ড পর্যাপ্ত সরবরাহ নাই, সেটি ঠিক নয়। পর্যাপ্ত টিকা কার্ড আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সহকারীদের টিকা কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে। টিকাদানের পরও সব নবজাতক শিশুদের টিকা কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো নবজাতকের অভিভাবক ইপিআই টিকা কার্ড না পেয়ে থাকেন তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নবজাতকদের অভিভাবককে ইপিআই টিকা কার্ড দেওয়ার বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি, প্রয়োজনে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। 

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শিশু মৃত্যু হার কমাতে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের সাতটি টিকা দেওয়া হয়। বিনামূল্যে টিকা কার্ড সরবরাহ করার নিয়ম। যদি কোনো স্বাস্থ্য সহকারী টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এ.বি.এম আবু হানিফ বলেন, টিকা কার্ড প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেখভাল করে। ইপিআই কার্যক্রম সফলতায় প্রধানমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সরকারের এই কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে কোনো স্বাস্থ্য সহকারী যদি টিকা কার্ড সরবরাহ না করে থাকে এবং টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে