চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে বদলি নিয়ে বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এসময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে শাসাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোবাইল করেন চেয়ারম্যানের পুত্র।

সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে বরিশাল জেলা পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মহিউদ্দিন মাহিনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, জেলা পরিষদে দায়িত্বরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামুনকে দুইদিন আগে মারধর করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক। বিষয়টি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ডাকবাংলো থেকে মামুনকে বদলি করে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সংযুক্ত করেন। মামুনের বদলির আদেশ মেনে নিতে পারেননি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এজন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার কক্ষে ডেকে এনে কারণ জানতে চান। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান কর্মচারী মামুনকে আগৈলঝাড়া উপজেলায় বদলি করার জন্য বলেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রধান নির্বাহী। 

এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মতানৈক্য হয় এবং চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত করে তার সামনে থেকে উঠতে গিয়ে পায়ে লেগে বসার চেয়ার পড়ে যায়। সেই চেয়ার না তুলে নিজের কক্ষে চলে যেতে চান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তখন চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে থাকা চেয়ারম্যান পুত্র আতিকুর রহমান শিহাব প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চেয়ার ফেলে দেওয়ার কারণ জানতে চান। এরপরেই তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে জেলা ও মহানগরের ছাত্রলীগ নেতাদের মুঠোফোনে কল করে জেলা পরিষদে আসার জন্য বলেন।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, পদাধিকার বলে প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব আমার। কর্মচারী বদলি-নিয়োগের ক্ষমতাও। চেয়ারম্যান শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। সেই হিসেবে মামুনকে বদলি করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই। এ বিষয়টি জানাতে তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে যান। তখন চেয়ারম্যান তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন এবং তার ছেলেও খারাপ ব্যবহার করেন।

অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন প্রধান নির্বাহী। তিনি সকল কাজের আগে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। মামুনকে ডাকবাংলো থেকে দপ্তরে বদলি করার বিষয়টি প্রধান নির্বাহী তার সঙ্গে আলোচনা করেননি। তিনি (চেয়ারম্যান) অন্য মাধ্যমে শুনে প্রধান নির্বাহীকে নিষেধও করেছিলেন। তারপরও তাকে বদলির আদেশ করায় সোমবার দুপুরে প্রধান নির্বাহীর কাছে এর কারণ জানতে চান। তিনি রেগে গিয়ে মামুনকে আগৈলঝাড়া উপজেলা ডাকবাংলোতে বদলি করতে বলেন। তখন প্রধান নির্বাহী তার সঙ্গে উল্টো রূঢ় আচরণ করে চেয়ার ধাক্কা দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ান। তখন সেখানে উপস্থিত চেয়ারম্যানের ছেলে প্রধান নির্বাহীর কাছে এ ধরনের আচরণ করার কারণ জানতে চান। এর বেশি কিছু হয়নি বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, আমার সঙ্গে রুঢ় আচরণ করায় হয়তো আমার ছেলে কাউকে ফোন করতে পারে। আমি তাকে বলেছি, বিষয়টি জেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ এবং তাকে চলে যেতে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস