প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাকা ঘর পেয়ে আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। ঘর পরিষ্কার করে, উঠানে মাটির চুলা তৈরি করে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। এখন আর তারা আর ভূমিহীন বা আশ্রয়হীন নন। 

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোল ও উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের গারাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়হীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে ভীষণ খুশি। তারা এখন ওই ঘরকে কেন্দ্র করে সুন্দরভাবে জীবন সাজাতে ব্যস্ত।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুর্নবাসনের লক্ষ্যে চতুর্থ পর্যায়ে ৫২১টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে ১৮৪টি ঘর আগামী ২২ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুভ উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর ৫টি, ঘাটাইল ৪০টি, দেলদুয়ারে ৫টি, সখীপুর ১৯টি, কালিহাতীতে ৭০টি, ধনবড়িতে ১০টি, মধুপুরে ৫টি ও ভূঞাপুর উপজেলায় ৩০টি ঘর রয়েছে। এর আগে তৃতীয় ধাপ পর্যায়ে ৬৮৯টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গোপালপুর উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোল এলাকার আশ্রয়ন কেন্দ্র প্রকল্পের ২৮ শতাংশ জায়গায় জুড়ে ১২টি ঘরে ১২টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে কেউ নাপিত, কেউ প্রতিবন্ধী, কেউ ভ্যান চালায়, কেউ দিনমুজুর, কেউ অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন, কেউ রাস্তায় ভ্রাম্যমান দোকান করে সংসার চালান। এছাড়া উপজেলার গারাবাড়িতে অবস্থিত আশ্রয়ণ কেন্দ্রের অধিকাংশ পরিবার নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়েছিল। এখন সেখানে পুর্নবাসিত হয়ে অনেকেই সাবলম্বী হয়েছেন।

এসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অনেকেই এখন সাবলম্বী। এ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে পারিবারিক পুষ্টিবাগান, প্রত্যেক ঘরের সামনে বিভিন্ন সবজি ও ফলজ গাছ। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেখানকার বাসিন্দারা পাচ্ছেন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, সাবলম্বী করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন উপকরণ বিতরণসহ সরকারি সব ধরনের আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা।

শিয়ালকোল আশ্রয়ণ প্রকল্প কেন্দ্রের শাহিনা বেগম বলেন, স্বামী ছেলে সন্তান থাকলেও নিজের ঘরবাড়ি ছিল না। অন্যের জমিতে পাটখড়ি দিয়ে ঘর তৈরি করে থেকেছি। স্বামী চোখে কম দেখে। ছেলেটাও খোঁজ নেয় না। শেখ হাসিনা সরকার ঘর বাড়ি দেবে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। বাবা-মা যেমন সন্তানদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করেন তেমনি মাননীয় আমাদের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। কাজ কাম করে সংসার না চললেও অন্তত শান্তিতে  রাতে ঘুমাতে পারবো। এখন আমি জায়গার মালিক। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখুক আমাদের মতো অসহায় মানুষদের জন্য।

নাসিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। দুই ছেলে নিয়ে গ্রামের একটি দোকান ঘরে বসবাস করতাম। এখন অনেক দামী জায়গাসহ ঘর করে দিয়েছে সরকার। আমি অসহায় মানুষ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি মাননীয় শেখ হাসিনার জন্য। ইউএনও স্যার ও পিআইও স্যার যদি সহায়তা না করতেন তাহলে এটা সম্ভব ছিল না। এই ইউএনও এবং পিআইও স্যারের জন্য দোয়া করি। 

শুধু নাসিমা বা শাহিনা নয় তাদের মতো কয়েক শত হতদরিদ্র ভূমিহীন মানুষ আশ্রয়স্থল খুঁজে পেয়ে জীবন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। তারা বলছেন, তাদের এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে চতুর্থ পর্যায়ে ৪২টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৩০টি ঘরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেও উপজেলায় তিন ধাপে ১৭০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশ পরিবার যমুনায় ভাঙনে ভূমিহীন ছিল। তাদের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুর্নবাসিত করা হয়েছে। এদের অনেকেই সাবলম্বী হয়েছে। তারা সকলেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ৪২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি ঘর প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। ওই দিন আশ্রয়ণ প্রকল্প কেন্দ্রের পরিবারদের হাতে ঘরের চাবিসহ কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। উপজেলায় চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ২১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দারের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় ঘর নির্মাণ কমিটির সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সকলে মিলে কাজের গুণগত মানোন্নয়ন বজায় রেখে অত্যন্ত সুন্দরভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করে যাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেককে বিধবা ভাতা, সেলাই মেশিন দেওয়া, যিনি কিছুই করতে পারছেন না তাকে একটি ভ্যান দেওয়া কার্যক্রম চালু করেছি। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মাঝে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরকে