শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মিরাশা চাষি বাজার। এই বাজারে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার রসুন বিক্রি হয়। স্থানীয় কৃষক, আড়তদার ও পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত থাকে কৃষকদের এই বাজার। পদ্মা সেতু হওয়ার পর যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কারণে সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা সহজে আসতে পারেন মিরাশা চাষি বাজারে। ফলে বেচাকেনা বেড়েছে বলে দাবি আড়তদার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে মিরাশা চাষি বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ, টমেটো, করলা, বেগুন, ধনেপাতাসহ নিজেদের চাষ করা বিভিন্ন প্রকার মশলা ও শাক-সবজি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। বাজারে মশলা ও শাক সবজির প্রায় দুই শতাধিক পাইকারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে রসুন বেচাকেনা হয় ৭০টি দোকানে। এসব দোকানে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করছেন। 

স্থানীয় চাষি নুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রসুন চাষে বিঘা প্রতি আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির রসুন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি। গত পাঁচ বছর ধরে লোকসান হয়েছে। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় আমরা ভালো আছি। সরকার যদি রসুন আমদানি না করে তবে কৃষকরা ভালো থাকেন, জনগণও ভালো থাকে।

বাজারের আড়তদার আব্দুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেজি প্রতি কাঁচা রসুনের বাজার দর বর্তমানে প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা আছে। চাষি বাজারের রসুন নাটোর, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই পাইকার এসে আমাদের থেকে কিনে নিয়ে যায়।

আড়তদার মতিউর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন প্রতিটি রসুনের দোকানে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার কেজি রসুন বেচাকেনা হয়। কোনো দোকানেই পাঁচ হাজার কেজির কম বিক্রি হয় না।

আব্বাস উদ্দিন নামে এক পাইকার বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে এসেছি। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে মাত্র দুই ঘণ্টায় চাষি বাজারে পৌঁছাতে পারি। অল্প সময়ে মালামাল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি। বাজারের আড়তদারসহ চাষিরা বেশ মিশুক। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোই চলছে।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা পাইকার রেজাউল করীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন চাষি বাজারে আসি রসুন কিনতে। বাজারের নিরাপত্তা যথেষ্ট ভালো। নির্বিঘ্নে আমরা মালামাল কিনে গন্তব্যে ফিরতে পারি। এই বাজারের রসুন অন্যান্য এলাকার রসুনের তুলনায় বেশ ভালো।

রসুন প্যাকেট করতে সহায়তাকারী শ্রমিক বকুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলবদ্ধ হয়ে কাজ করি আমরা। সারাদিনে ভালোই কাজ হয়। সংসার ভালোই চলে। 

রুজিনা নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, চাষি বাজারে কাজ করে সংসার খরচ চালাই। ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখেই আছি। সারাদিন কাজ করে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পাই। এই কাজ করে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। ভালোই আছি।

রসুন গাড়িতে ওঠানো নামানোর কাজে সহায়তাকারী শ্রমিক হাবিব ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বড় গাড়ি হলে বেশি ইনকাম, ছোট হলে কম। তবে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আমাদের ইনকাম হয়।

মিরাশা চাষি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন খালাসি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা ব্রিজ হওয়ায় সারাদেশ থেকে বাজারে পাইকাররা আসেন প্রতিদিন। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীসহ অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে মালামাল পৌঁছানো যায়। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসায় চাহিদা বেশি। রসুন বিক্রি করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের বাজারে অন্যান্য সবজি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রসুন বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাজিরা উপজেলায় ব্যাপক রসুন উৎপাদিত হচ্ছে। এ বছর ২১৬০ হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল। পুরোটাই আমাদের অর্জিত হয়েছে। কাঁচা রসুন বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের খরচের তুলনায় বাজার দরের সামঞ্জস্য রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকার বাজারসহ দেশের বড় বড় সব বাজারের পাইকাররা এখান থেকে রসুন নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে যে দাম রয়েছে, আগামীতে কৃষক আরও বেশি দাম পাবে। আমরা কৃষকদের উন্নত মানের রসুন চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগে ফেরির মাধ্যমে ঢাকার বাজার ধরতে অনেক কষ্ট হতো। অনেক সময় ঢাকার বাজারে যাওয়া সম্ভব হতো না। এখন পদ্মা সেতুর কারণে কৃষকরা হাতের নাগালের মধ্যে ভালো দামে রসুন বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

আরএআর