নাটোরের বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের ফসলি মাঠে আগুন লেগে প্রায় ৩৬ বিঘা জমির পাকা গম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ২৪ জন কৃষক  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি ১৭ কৃষকের ১২ বিঘা জমির পাকা গম পুড়ে গেছে। শুক্রবার দুপুরে একজন কৃষকের অসর্তকতায় এই ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানায়, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও প্রায় এক ঘণ্টা পর ৩টার দিকে তারা বিষয়টি জানতে পারেন। ততক্ষণে আগুনে গম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, রওশন হোসেন নামের এক কৃষক শুক্রবার সকালে তার জমির পাকা গম কেটে ঘরে তোলেন। দুপুর ১২টার দিকে গমের খরের গোড়ার অংশগুলো ধ্বংস করার জন্য তিনি তার ওই জমিতে আগুন দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। খরের গোড়ায় লাগানো সেই আগুন পাশের পাকা গম গাছে লাগার পর তা দ্রুত অন্যান্য কৃষকের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। জুম্মা নামাজ এবং রমজান মাসের প্রথম রোজার দিন হওয়ায় ওই ফসলের মাঠ এলাকার কোনো কৃষক ছিলো না। ফলে নিমিষেই আগুনে সব পাকা গম পুড়ে যায়। বেলা ৩টার দিকে খবর পেয়ে বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আশরাফ, সাইফুল, শামসুল, গিয়াস ও শাহজাহান জানান- পুড়ে যাওয়া ওইসব জমিতে এক বিঘায় কমপক্ষে ১৫ মণ গম উৎপাদন হয়। সেই হিসাবে ৩৬ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৫৪০ মণ গম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক চাঁদ মিয়া, সাত্তার, মজিদ, কাদের ও গাফফার বিলাপ করে বলেন, সামনে ঈদ। গম বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনতে পারতাম। কিন্তু সেটা আর হলো না। এছাড়া তারাসহ কৃষকদের অনেকেই সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গম চাষ করেছিলেন। সেই টাকাও পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এমন ক্ষতিতে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, রওশন হোসেন নামে এলাকার একজন সাবেক সেনা সদস্যের অসাবধানতার কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে এলাবাসীসহ ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন। ঘটনাটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সরকারিভাবে ব্যবস্থা করা যেত। তবুও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৭ কৃষক। কারও ১০ কাঠা, কারও ৭ কাঠা এভাবে ১২ বিঘা জমির পাকা গম পুড়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার বিশিষ্টজনরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষখদের নিয়ে রওশনের সঙ্গে বসে স্থানীয়ভাবে সুরাহার উদ্যোগ নিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করে প্রত্যেককে দ্রুত প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মারিয়াম খাতুন ঘটনার সত্যতা নিশিচত বলেন, তিনি কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সম্ভব হয় এমন কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেন ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য তাদের তালিকা করে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।

তাপস কুমার/এমএএস