জোড় ঘোড়ার দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য মুগ্ধ করছে সবাইকে
শ্যাওড়াগাছের তৈরি দৃষ্টিনন্দন জোড় ঘোড়ার ভাস্কর্য
পাবনায় শ্যাওড়াগাছের তৈরি দৃষ্টিনন্দন জোড় ঘোড়ার ভাস্কর্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে মুগ্ধ করছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে এসে বৃক্ষপ্রেমী মানুষ এ জোড় ঘোড়াকে নিয়ে সেলফি তোলেন, ছবি তোলেন। গাছকেও বিশেষ আকার দেওয়া হলে তা যে কতটা সৌন্দর্যের ধারক-বাহক হতে পারে, এ জোড় ঘোড়া না দেখলে তা যেন বিশ্বাস করা কঠিন।
প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করে এ জোড় ঘোড়াটি তৈরি করেছেন পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নের বৃক্ষপ্রেমী দুলালুর রহমান খান। চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশে ভাইবোন নার্সারির গেটে দুটি পাশাপাশি শ্যাওড়াগাছকে ঘোড়ার আকৃতি দিয়েছেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে চারাগাছ ও বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
দুলালুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, শখের বসে এটি তৈরি করেছি। লোহার রড দিয়ে ঘোড়ার আকৃতি তৈরি করে মাটিতে স্থাপন করে তার চারপাশে জিআই তারের নেট লাগিয়ে দিয়েছি। নিচে দুই সারি দেড় ফুটের মতো উচ্চতার শ্যাওড়াগাছ। দেড় ফুট ওপর থেকে শ্যাওড়াগাছ ঘোড়ার চার পায়ের মধ্য দিয়ে তুলে দিয়েছি। যাতে দেখতে প্রকৃত ঘোড়ার মতো মনে হয়।
ধীরে ধীরে শ্যাওড়াগাছ বড় হয়ে ঘোড়ার পুরো শরীরটাতে, মুখে, লেজে স্থান করে নিয়েছে। এ ঘোড়া দুটি পাঁচ ফুট উঁচু এবং সাত ফুট দীর্ঘ। দুই সাড়ি শ্যাওড়াগাছের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দুটি ঘোড়া। এলাকার অনেকে এ ঘোড়া দুটিকে জোড় ঘোড়া বলে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
এ ঘোড়া দুটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সৌন্দর্যপ্রিয় বৃক্ষপ্রেমীরা এমন জোড় ঘোড়া তৈরি করে দিতে দুলালুরের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানে জোড় ঘোড়া তৈরির অর্ডারও পেয়েছেন তিনি। প্রতি জোড়া ঘোড়া তৈরির জন্য তিনি ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক নেন। কেউ অর্ডার করলে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়, ডেলিভারি দেওয়ার সময় পুরো টাকা নিয়ে নেন তিনি।
শ্যাওড়াগাছের দৃষ্টিনন্দন ঘোড়া (দুটি ঘোড়া) দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। পাবনা-চাটমোহর সড়কে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী অনেক মানুষ এ জোড় ঘোড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রাস্তার পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, এমনকি বাস থেকে নেমেও এই জোড় ঘোড়া দেখতে ভিড় জমান। ব্যক্ত করেন ভালো লাগার অনুভূতিতে, প্রশংসা করেন নার্সারি মালিকের। অনেকেই আবার দেখে মুগ্ধ হয়ে এটা নিজের বাড়ির গেটে স্থাপন করার জন্য অর্ডার করে যান।
এলাকার সেলফিবাজদের পাশাপাশি দূরদূরান্তে যাতায়াতকারী অনেকে পরিবহন থেকে নেমে দৃষ্টিনন্দন ঘোড়াকে নিয়ে সেলফি তোলেন, ছবি তোলেন। গাছকেও বিশেষ আকার দেওয়া হলে তা যে কতটা সৌন্দর্যের ধারক হতে পারে, এ জোড় ঘোড়া না দেখলে তা যেন বিশ্বাস করা কঠিন। তাই প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে এই বাগানের দৃষ্টিনন্দন ঘোড়া দেখার জন্য।
পাবনা শহর থেকে জোড় ঘোড়া দেখাতে আসা মাসুদ রানা জানান, এই নার্সারিতে এসে ভেতরে ঢুকতেই গেটে গাছের ঘোড়া দেখে অবাক হই। আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে এ দৃশ্য। এখানে প্রায়ই দেখতে আসি। খুবই ভালো লাগে।
তিনি আরও বলেন, দুলাল কেবল জোড় ঘোড়াই নয়, অগ্নিঝাউ, কাটা ঝাউ, কামিনী, মাধবীলতাসহ বেশ কিছু গাছ বিশেষ বিশেষ আকার দিয়ে ডিজাইন করেছেন। সেগুলো দেখেও তিনি আনন্দিত ও বিমোহিত হন।
আরেক ভ্রমণপ্রিয় যুবক রশিদ হায়দার জানান, আমাদের জেলায় বিনোদনমূলক কোনো পার্ক না থাকায় রেলস্টেশনে প্রায়ই ঘুরতে আসি। হঠাৎ একদিন পাশের এই নার্সারিতে ফুল কিনতে এসে দেখি এই জোড় ঘোড়া। তারপর থেকে এই নার্সারিতে আমরা ঘুরতে আসি, জোড় ঘোড়া দেখে ভালোই লাগে।
লাবণী আক্তার লুপা বলেন, এই জোড় ঘোড়া বানানোর পর থেকে মাঝেমধ্যেই আমার বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে আসি, খুবই মজা করি, আনন্দ করি, ফুলের বাগান দেখি, ফুল কিনে নিয়ে যাই, সবচেয়ে বেশি চমক লাগে গাছ দিয়ে কীভাবে ঘোড়া তৈরি করেছেন, অতি চমৎকার কাজ এটি। মাঝেমধ্যে বাবা-মাকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন জোড় ঘোড়া দেখার জন্য।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন বৃক্ষপ্রেমিক নার্সারির মালিক এমন একটি কাজ করেছেন, যাতে তিনি প্রশংসা পাচ্ছেন। এটি অবশ্যই ভালো কাজ। এসব কাজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, ভালো থাকে পরিবেশ। যেভাবেই তিনি তৈরি করেন না কেন, গাছ তো লাগিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সেগুলোর যত্ন-পরিচর্যা করে বিশেষ আকৃতি গঠন করেছেন। তার এমন ভালো কাজের সাফল্য কামনা করেন তিনি। মানুষকে এমন কাজের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
রাকিব হাসনাত/এনএ