ফরিদপুরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আট আনা’র (৫০ পয়সা) অনুদানে শুরু হয়েছে আট দিনের বইমেলা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে ব্যতিক্রমী এ আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গ্রন্থ মেলায় প্রথম দিন থেকেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ফরিদপুরে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১। 

শনিবার (২০ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জ্ঞানের আলো ট্রাস্টের আয়োজনে এ গ্রন্থ মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুস্তক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৩২টি স্টলের সমাহার রয়েছে। মেলা আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে। 

বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।  

প্রধান অতিথি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, শুধু হৃদয়ে একুশকে ধারণই নয়, এর সঙ্গে জ্ঞানকেও এগিয়ে নিতে হবে। তবেই আমাদের চেতনা স্থায়িত্ব পাবে। তিনি ফরিদপুরের এ গ্রন্থমেলা সম্পর্কে বলেন, আট আনায় জীবনের আলো কেনা থিমটা অসাধারণ। যে চিন্তা ও চেতনায় এটা করা হচ্ছে তা অবশ্যই স্থায়িত্ব পাবে।  

তিনি বলেন, প্রায় সকল লেখক, সাহিত্যিক এবং গবেষকেরই লাইব্রেরির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। আমরা নতুন করে লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত হবো। সময়কে মূল্যায়ন করতে শিখব। কেননা, প্রতিটি সময় আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা দেয়। আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ মেলার স্টল পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে প্রথাগত পাঠাভ্যাস থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করছে। ফলে কল্পনার জগতে, মননের জগতে দেখা দিচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। সৃষ্টিশীলতার চর্চা হচ্ছে না, সংবেদনশীলতার চর্চা হচ্ছে না, মানবিক মূল্যবোধ সঞ্চারিত হচ্ছে না- নতুন প্রজন্মের মধ্যে। 

তিনি বলেন, আমাদের যে অনুধাবন তা হচ্ছে-একটি আলোকিত প্রজন্ম গড়ে তোলা। একটি আলোকিত প্রজন্মই পারে স্বপ্ন নির্মাণ করতে, স্বপ্নের লালন করতে এবং স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে। এ লক্ষকে সামনে রেখে গত বছর থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে এক সপ্তাহব্যাপী বইমেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফরিদপুরে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রত্যেকের পঞ্চাশ পয়সায় বসেছে এ অনন্য আয়োজন। আর এমন আয়োজনে শরিক হতে পেরে উচ্ছসিত শিক্ষার্থীরা।

তিনি আরও বলেন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রাখবে এ ধরনের আয়োজন। মেলায় সাংস্কৃতিক মঞ্চে প্রতিদিন পরিবেশিত হবে নানা ধরনের দেশীয় সংগীত পরিবেশনা।

ফরিদপুরের এ গ্রন্থ মেলা একটি বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন ও তাৎপর্যবাহী মেলা। মেলাটি আয়োজিত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের দেয়া অর্থে। অনন্য সাধারণ এ উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে আট আনা (৫০ পয়সা) চাঁদা দেয় এবং বছরে এভাবে মোট ছয় টাকা চাঁদা দেয়। তাদের অর্থে আয়োজিত হচ্ছে চমৎকার বইমেলা। প্রাপ্ত এ টাকা আগামী দিনের সুস্থ সুন্দর শিক্ষার্থী তৈরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-শিক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া মেলায় বইয়ের পাশাপাশি আলোচনা সভা, বিতর্ক অনুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্য ইত্যাদি সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও থাকছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জামাল পাশা, পৌর মেয়র অমিতাব বোস, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশার্রফ আলী, ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ, বিসমিল্লাহ শাহ ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান খান, কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ। 

উপস্থিত ছিলেন বীর উত্তম ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আকন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক জেলা কমান্ডার শেখ আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, জেলা আওয়ামী মহিলালীগের সদস্য সচিব আইভি মাসুদ, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিয়া দত্ত। 

বি কে সিকদার সজল/এমএএস