যশোরের কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচনে স্বামীর পক্ষে কাজ না করায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সোহেল হাসান আইদ। ওই নির্বাচনে স্বামীর পক্ষে প্রচারণা না করে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ায় গত ২ মার্চ তিনি স্ত্রী জামিলা পারভীনকে তালাক দেন।

এদিকে ভুক্তভোগী নারী এ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) কেশবপুর পৌরসভার মেয়রের দফতরে লিখিত আবেদন করলে শনিবার (২০ মার্চ) বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই আবেদনপত্রে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও অভিযোগ তুলেছেন।

সোহেল হাসান আইদ কেশবপুর উপজেলার নরেন্দ্রপুর এলাকার মাদ্দার মোড়লের ছেলে ও জামিলা পারভীন একই উপজেলার নতুন মূল গ্রামের ছরমন মোল্লার মেয়ে। চার বছর প্রেমের পর জামিলা পারভীনকে বিয়ে করেন আইদ। ২৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জামিলা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিরামহীনভাবে স্বামীর নির্বাচনে কাজ করতে পারিনি। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য কাজ করেছি এমন অভিযোগ তুলে আইদ ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলে-মেয়ের সামনে আমাকে মারধর করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।

তিনি আরো বলেন, পৌর নির্বাচনে এক নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীতা করেন আইদ। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হোন। এমনকি পানির বোতল প্রতীকে মাত্র ৩৮ ভোট পেয়ে জামানতও হারিয়েছেন। এজন্য সে আমাকে দায়ী করে। পরে এসব অভিযোগে ২ মার্চ মণিরামপুর পৌর নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তিনি আমাকে তালাক দেন।

কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল জানান, বিষয়টি তাদের পারিবারিক। শুনেছি স্বামী দ্বারা ওই গৃহবধূ দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। ভুক্তভোগী নারী পৌরসভায় অভিযোগ দিয়েছেন। দুই জনকেই আসতে বলেছি। আলোচনা করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সোহেল হাসান আইদ বলেন, পারভীন নৌকায় ভোট দিয়েছে কি দেয়নি সেটি বিষয় না। সে আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আতিয়ার রহমানের উট পাখি মার্কার নির্বাচন করেছে। এটি স্বামী হিসেবে মর্যাদাহানি ও অপমানকর মনে হওয়ায় আমি তাকে তালাক দিয়েছি। এছাড়া আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী স্বামীর পক্ষে প্রচারণা না চালানোর অভিযোগে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে বিষয়টি শুনেছি। ওই নারী তার স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন।

আইদের বিরুদ্ধে কেশবপুর থানায় অস্ত্র, বিস্ফোরক ও নাশকতার ৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

জাহিদ হাসান/এমএইচএস