ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ভিজিডি কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচির (ভিজিডি) কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক নারী ইউপি সদস্য ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক নারী।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য ও তার স্বামী কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য দয়া রানী ও তার স্বামী অধীর কুমার। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ বিষয়ক কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন অধীর কুমার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালপাড়া এলাকার অমল চন্দ্রের স্ত্রী অমিতা রানী। অমল চন্দ্র সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম অসুস্থ থাকায় ৫ সদস্যের পুরো পরিবার অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করায় অমিতা রানী একটি ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার আবদার করেন ওয়ার্ড সদস্য দয়া রানীর কাছে। এ সময় দয়া রানীর স্বামী অধীর কুমার অমিতা রানীর কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ভোটে কর্মী হওয়ার সুবাদে অমিতা রানী এক হাজার টাকা দেন এবং তার নামে কার্ডটি হয়। তবে দয়া রানী কার্ড দিতে গড়িমসি করেন। কার্ডটি কখনো চেয়ারম্যানের কাছে, কখনো উপজেলায় আটকে রয়েছে বলে জানান।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, গত ২ এপ্রিল ভিজিডির চাল বিতরণ করা হয়েছে খবর পেয়ে ভুক্তভোগী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামের কার্ড দিয়ে চাল তোলা হয়েছে। তবে কে বা কারা চাল নিয়ে গেছে সে তথ্য কেউ জানেন না। এমতাবস্থায় ওই ইউপি সদস্যের কাছে গেলেও সাড়া দেননি।
অমিতা রানী বলেন, কার্ড আর চালের বিষয়ে দয়ারানী ও তার স্বামী অধীর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা গেলেও সাড়া দেননি। পরের দিন ইউপি সদস্য মোবাইলে কল করে বলেন, ‘তোমার কার্ড পাবে কিন্তু এবার চাল পাবে না’। তবে কেন চাল পাবেন না জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি। পরে বিষয়টি প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এভাবে আরও অনেকের কার্ড করে দিতে গিয়ে টাকা নিয়েছেন দয়া রানী। আমি অতিরিক্ত টাকা দিইনি, তাই টাকা উশুল করতে আমার কার্ডের দুই মাসের ৬০ কেজি চাল অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন।
একই দাবি বালাপাড়ার তানজিনা তিশার। তিনি বলেন, কার্ড পাইনি। মহিলা মেম্বার স্বামী-স্ত্রী মিলে কার্ড বাণিজ্য করেছেন। তাদের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিযোগের বিষয়ে দয়া রানী বলেন, আমি কিছুই জানি না। টাকা নিয়ে থাকলে তা আমার স্বামী জানে। আমি মেম্বার হলেও সব কাজ করেন তিনি। তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কী হয়েছে।
ইউপি সদস্যের স্বামী অধীর কুমার বলেন, অমিতা রানী নামে আমরা কাউকে চিনি না। এ নামে কোনো কার্ড নেই। যার কথা বলছেন-তিনি আসলে শান্তি রানী। শান্তি রানী নামের একজনের কার্ড থেকে চাল তোলা হয়েছে। অমিতা রানীর কার্ড সম্পর্কে কিছু জানি না। টাকা নেওয়ারও কোনো প্রশ্নই আসে না। আর তার চাল কে তুলেছে তাও বলতে পারব না। কার্ড হয়ে থাকলে পাবে, এতে আমাদের কী?
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহজাদী বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বাবু বলেন, বেশ কয়েকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনি টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছেন। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেই হোক তার বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল রায়হান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিজিডির কার্ড টাকার বিনিময়ে দিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এতে সরকার ও উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
শরিফুল ইসলাম/ওএফ