কুষ্টিয়ায় ৬৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর ৪৪ কিলোমিটার পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের লুটপাট, নিম্নমানের কাজ, উদাসীনতা, ধীরগতি ও তদারকির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে সরকার শত শত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে প্রকল্পের সুফল মিলছে না বাস্তবে। প্রমত্তা গড়াই নদী এখন ধু ধু বালুচর। এক সময় নদীর বুক চিরে ১২ মাস নৌকা চলতো, জেলেরা মাছ ধরতেন। সেই নদী এখন প্রায় পানি শূন্য ধু ধু বালুচর। যৌবন হারিয়ে মরতে বসেছে গড়াই।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় ৬৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর ৪৪ কিলোমিটার পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গড়াই নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে ২০১৮ সালে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পের ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, গড়াই নদী খননের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। গড়াই নদী না বাঁচলে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য যেমন রক্ষা হবে না, তেমনি সুন্দরবনও বাঁচবে না। ফলে এসবের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে দেশ।

স্থানীয়রা বলেন, গড়াই নদী এখন ধু ধু বালুচর। হেঁটে নদীর দীর্ঘপথ পার হতে হয়। পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে সরকারের শত শত কোটি টাকার প্রকল্প কোনো কাজে আসছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রকল্পের টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করে খাচ্ছে। পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের লুটপাট, নিম্নমানের কাজ, ধীরগতি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব রয়েছে। নদীতে এখন হাঁটুপানি, আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। 

তারা আরও বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতিবাজদের পকেটে চলে যাচ্ছে। খননের বালু সঠিক স্থানে ফেলা হচ্ছে না। খননের প্রস্থ ও গভীরতার মাত্রা খুবই কম। স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলেও গড়াই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আলী বলেন, নদীর খনন কাজ ঠিকমতো হয় না। এক দিন হলে ছয় দিন বন্ধ থাকে। কাজের কোনো গতি নেই। দিন দিন গড়াই নদী পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এখন নদীতে হাঁটু পানি, হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে মানুষ। গোসল করার পানিও নেই। নদীটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এক সময়ের প্রমত্তা গড়াই নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য লবণের যে মাত্রা প্রয়োজন, সেটাকে ব্যালেন্স করে গড়াই নদী। গড়াই নদীকে বাঁচাতেই হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন ঢাল হিসেবে কাজ করে। সুন্দরবন আমাদের অহংকার। গড়াই না বাঁচলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

নদী খননের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে কুষ্টিয়া ড্রেজার অপারেশন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, প্রকল্পের ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদীতে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা সেই পরিমাণ পানি নেই। কেন পানি নেই সেটি  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মায় পানির লেবেল সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। এজন্য গড়াই নদীতে পানির প্রবাহ কম। তবে পানির প্রবাহ সচল রাখতে ৬৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর ৪৪ কিলোমিটার পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে। পরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। সঠিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

রাজু আহমেদ/আরএআর