পিপি হাবীবুর হত্যা মামলার রায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সড়ক অবরোধ
সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ছয়জনের ফাঁসির আদেশের খবরে সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ছয়জনের ফাঁসির আদেশের খবরে সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা দাবি করেছেন, অর্থ দিয়ে মামলার রায়কে প্রভাবিত করেছে আসামিপক্ষ।
রোববার (২১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। একই সঙ্গে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ঘণ্টাব্যাপী মিছিল করেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য অনিক মাদবর ও যুবলীগ নেতা শহর আলী বলেন, এই রায় আমরা মানি না। সব আসামির ফাঁসি চাই। হত্যায় সরাসরি জড়িতদের খালাস দিয়েছেন আদালত। অর্থের বিনিময়ে আসামিদের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে। রায় পরিবর্তন না হলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
এদিকে, অবরোধের ফলে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরি তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
সড়ক অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পিপি হাবীবুর রহমানের ছেলে জেলা জজ আদালতের এপিপি পারভেজ রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব আমরা। তবে এটা সত্য; বাবা ও চাচা হত্যার বিচারের রায়ে খুশি হইনি আমরা। যাদের বিরুদ্ধে বাবা ও চাচা হত্যার প্রমাণ রয়েছে তাদের অনেকেই খালাস পেয়েছেন। এজন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব আমরা।
২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ।
১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তার ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা চালানো হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন খুন হন। হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ ঘটনায় হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১৩ আসামিকে জামিন দেন। ২৬ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার প্রধান আসামি সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারসহ ১৩ আসামি আদালতে হাজির না হওয়ায় ওই দিন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
রোববার শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসাইন মামলার রায়ে ছয়জনের ফাঁসির আদেশ ও সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। একই সঙ্গে ৩৯ জনকে খালাস দেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম