বেহাল দশায় চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসক নেই। আর কয়েকটিতে থাকলেও নিয়মিত সেখানে যান না চিকিৎসকরা। ফলে এ সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে মিডওয়াইফ, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়ে। এ ছাড়া ওষুধ সংকটও রয়েছে। সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত এসব উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে রোগীরা খুব একটা সেবা পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ২৪টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৬৭টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে তদারকি করা হয়। মূলত উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সাকমো, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন এমএলএসএস ও একজন নিরাপত্তারক্ষীর পদ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য হয়ে আছে। আর কিছু কেন্দ্রে চিকিৎসক পদায়ন থাকলেও তারা নিয়মিত সেখানে যান না। এতে করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এ ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধ সংকটও রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কয়েকটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার ক্যলাণ কেন্দ্রে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট ও এমএলএসএস পদও ফাঁকা পড়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে।

জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানান, আশুগঞ্জ ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বেশির ভাগ সময়ই চিকিৎসক থাকেন না। রোগীরা শুধু ওষুধ নেওয়ার জন্য সেখানে যান। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধও পাওয়া যায় না।

বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাকিম মিয়া জানান, তাদের ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। শুধু একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আছেন। চিকিৎসক না থাকায় রোগীরাও সেখানে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থাও বেহাল বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সাবিহা বিনতে হোসাইন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। সেজন্য তিনিই এখন রোগী দেখছেন। তবে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাকমো, ফার্মাসিস্ট ও এমএলএসএস নেই। চিকিৎসক ও তিনিই রোগীদের সেবা দান এবং পুরো স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেখভাল করেন। তবে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী সকল ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শাহনাজ আক্তার, মিডওয়াইফ, আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র

চান্দুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা কারিমুন আক্তার জানান, প্রতিদিন ১-১৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। কিন্তু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে চিকিৎসক পদায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ফার্মাসিস্ট ও এমএলএসএসও নেই। রোগীদের সেবাদানের পাশাপাশি তিনিই ওষুধ বিতরণ করেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধের কিছুটা সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য। আমাদের জনবল সংকট আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কাজের চাপ বেশি। সেজন্য কিছু উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সেখানে কাজ করেন।

আজিজুল সঞ্চয়/এসপি