গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে বাড়ছে ভুট্টার চাষ
ভুট্টাখেত
নগরায়নের প্রভাবে দিন দিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। উজাড় হচ্ছে গো-চারণভূমি। এই অবস্থায় অনেকেই দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য কৃত্রিম উপায়ে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। ওষুধ প্রয়োগ করে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের বিপরীতে বরিশালে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিকভাবে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি। এজন্য হেক্টরের পর হেক্টর আবাদ করা হচ্ছে ভুট্টা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ভুট্টায় প্রায় সব পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। এ নিয়ে গবাদি পশুর মালিকদের উৎসাহিত করায় তারাও ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
চাষিরা জানিয়েছেন, ভুট্টা খাইয়ে গবাদি পশুকে মোটাতাজাকরণ করা হলে পশুটি সুস্থ থাকে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হলে নির্দিষ্ট সময় পর পশুর স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। কিন্তু ভুট্টা খাওয়ানো হলে সেই ঝুঁকি থাকে না।
বরিশাল সদর উপজেলার সরশি গ্রামে শীতকালীন সবজি উঠে যাওয়ার পর মাঠজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা ভুট্টা চাষে। কেউ চালাচ্ছেন লাঙল, কেউ সার ছিটিয়ে দিচ্ছেন খেতে আবার কেউ ভুট্টার খেতে নিড়ানি নিয়ে আগাছামুক্ত করছেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রিফাত জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কৃষিকাজে সাহায্য করে সে। নিজেদের খেত চাষ করার জন্য চারটি গরু আছে। এগুলো স্বাস্থ্যবান রাখতে প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ করে। এর মধ্যে কোরবানির সময়ে দুটি গরু বিক্রি করে দিবে।
বরিশাল সদর উপজেলার মধ্যে কাশিপুরের সরশি এবং চরবাড়িয়ার মুকুন্দপট্টিতে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়। কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, দেড় হাজার টাকায় প্রতি শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করেন তারা। তবে ভুট্টাখেতে লাল শাক বপন করলে ভুট্টাচাষের খরচও পূরণ হয়ে যায়। অর্থাৎ দোফসলি জমিতে ভুট্টা চাষ বিনামূল্যে করা যায়।
নূর উদ্দিন নামে আরেক ভুট্টা চাষি বলেন, পাকা ভুট্টা মেশিনে ভেঙে পাউডার করে গরুকে খাওয়াতে হয়। দিনে দেড় থেকে দুই কেজি খাওয়ালে দুই মাসেই গরুটি দ্বিগুণ স্বাস্থ্যবান হয়ে যায়। এই স্বাস্থ্য কখনো ভাঙে না। শুধু তিনি নন, এখনকার চাষিরা গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের জন্য ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছর এই উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৩০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আগামী বছর আবাদের পরিমাণ বাড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোসা. ফাহমিদা হক বলেন, এ বছর যে তিনটি পর্যায়ে প্রণোদণা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ভুট্টা চাষ একটি। ভুট্টার মধ্যে যে খাদ্যগুণ রয়েছে তা গবাদি পশুর জন্য খুবই ভালো। এজন্য বরিশালে গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় খামারিরা এই খাদ্যটাকে সবার ঊর্ধ্বে রেখে থাকেন। আমরাও কৃষকদের ভুট্টা চাষে উৎসাহিত করে থাকি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দিন দিন গো-চারণভূমি কমে যাচ্ছে। জমির পরিমাণ কমে আসছে। এই অবস্থায় চারণভূমির খাবারের চাহিদা পূরণ করবে ভুট্টা।
এসপি