জন্ম থেকেই তিন ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনজনই পরিপূর্ণ পা না থাকায় চলতে পারেন না ঠিক মতো। কেউ লাঠিতে ভর দিয়ে আবার কেউ অসম্পূর্ণ পা দিয়েই অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বাঁশের ডুলি, ডালি ও চাটাই বানিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন তিন ভাই। কিন্তু প্লাষ্টিকের সামগ্রীতে বাজার সয়লাভ হওয়ায় কমে গেছে তাদের তৈরি পণ্যের কদরও। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত কাজ জুটছে না তাদের কপালে। একদিন কাজ না করলে কী খাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তাদের সবার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। তবে সরকারি অথবা বেসরকারি অন্য কোনো সহযোগিতা তারা পান না। তাই সংসার চালানো তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অসহায় এই তিন ভাই কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চিলকিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা সোলেমন (৬৫), মোন্নাফ (৫৫) ও ছামাদ (৫০)। সাত ভাইবোনের মধ্যে তারা তিন ভাই জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের বাকি ভাইবোনেরা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাবন করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী তিন ভাই বিয়েও করেছেন। রয়েছে তাদের সন্তানও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিন ভাই জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পরিপূর্ণ পা না থাকার কারণে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। বড় ভাই সোলেমন চার ছেলেমেয়ের জনক, দ্বিতীয় ভাই মোন্নাফ এক ছেলের জনক ও তৃতীয় ভাই ছামাদ তিন মেয়ের জনক। তবে তাদের ছেলেমেয়েরা সবাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তাদের ভিটেমাটি ছাড়া নেই অন্য কোনো আবাদি জমি। 

কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী সোলেমন, মোন্নাফ ও ছামাদের সঙ্গে। তারা বলেন, আমরা তিন ভাই জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনজনেরই পা নেই। সংসারও আমাদের আলাদা আলাদা। বাঁশ থেকে ধারা বা ডুলি, ডালি ও চাটাই বানিয়ে সংসার চলতো তিনজনের। এখন এই কাজটাও আর চলে না। একদিন কাজ করলে, তিন দিন বসে থাকতে হয়। এভাবে কি আর সংসার চলবে বলেন। সবার ঘরে ৬-৭ জন করে সদস্য। কাজ না থাকলে মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকতে হয়। না খেয়ে থাকলেও আমরা মানুষের কাছে হাত পাতি না, ভিক্ষা চাই না। লজ্জা লাগে। আমরা কর্ম করতে চাই। তাই আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন যদি কেউ মিশুক গাড়ি কিনে দিতো আমাদের। সেই মিশুক (অটোরিকশা) চালিয়ে স্ত্রী সন্তানদের খাওয়াইতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসান রানা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সোলেমন, মোন্নাফ ও ছামাদ আমার মামা হন। আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তাদের পা নেই। তারা যে কাজ করছেন, সেই কাজের আয় দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না এখন। খুব কষ্ট তাদের। সমাজের দানশীল ও বিত্তবান মানুষ যদি এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা দূর হবে। কেউ যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যবস্থা করে দেন তা চালিয়ে তারা ভালোমতো চলতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। 

মমিন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, আমার এখানকার একই পরিবারের তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা আমার সম্পর্কে ভাই হয়। ছোটকাল থেকে দেখছি তাদের খুব কষ্ট। তাদের কষ্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না। একটা মানুষ ঠিকমতো চলাফেরা করতে না পারলে কীভাবে সংসার চালায় বলেন। সরকারের পাশাপাশি সমাজের দানশীল মানুষ যদি তাদের পাশে দাঁড়ায় হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা কমবে। 

সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাঈদুর রহমান বলেন, এই তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তারা খুবই গরিব, অনেক কষ্ট করে সংসার চালান। তারা যে কাজটা করতেন, সেই কাজ এখন আর ভালো চলে না। তারপরও আমি সবসময় সহযোগিতা করার চেষ্টা করি তাদের।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। এ বিষয়ে অর্থোপেডিক ডাক্তাররা সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারবেন।

আরএআর