সুস্থ ১১ জনকে নিয়ে বিপাকে পাবনা মানসিক হাসপাতাল
‘মন আর মানুষ’। মন থেকেই হয়তোবা মানুষ নামের উৎপত্তি। তাই মনকে বাদ দিয়ে মানুষের পূর্ণতা কখনোই কল্পনা করা যায় না। সৃষ্টিকর্তার এই বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগতে শুধু মানুষেরই পূর্ণ মন আছে, আর সব প্রাণীর নেই অথবা থাকলেও তা অসম্পূর্ণ। তাই তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
মানুষের দেহ নামক যন্ত্রটির মধ্যে মন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন এর সার্বিক পরিচালনা ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড গুরুতর বাধার সৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়। মানসিকভাবে এসব অসুস্থ ব্যক্তি নিজে যেমন কষ্ট পান, তেমনিভাবে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ান পরিবারের জন্য, তথা গোটা সমাজের জন্য। তাই পূর্ণাঙ্গ মানসিক সুস্থতার লক্ষ্য নিয়েই পদ্মাবিধৌত ছায়াসুনিবিড় পাবনার হিমায়েতপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটি।
বিজ্ঞাপন
১৯৫৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময় শীতলাই হাউসের ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি বর্তমানে ৫০০ শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে। ৭৪ দশমিক ২১৫৯ একর জায়গা নিয়ে সুবিশাল পরিসরে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে মোট জমি ৮১ দশমিক ২৫ একর।
১৯৫৭ সালে পাবনার সিভিল সার্জন ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন গাংগুলী। তার স্বপ্ন ছিল পাবনায় এমন একটি মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, যাতে এখানে থেকে সারাদেশের মানুষ উপকৃত হন। তিনি ছিলেন বরিশালের মানুষ, কিন্তু স্বপ্ন দেখেছেন পাবনার জন্য।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতালের মূল অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করা হয়। জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার হিমায়েতপুর ইউনিয়নের হিমায়েতপুর গ্রামকে। অধিগ্রহণ করা হয় ১১১ দশমিক ২৫ একর জমি। বিশাল এলাকায় শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। দুই বছর ধরে নির্মাণকাজ চলে শেষ হয় ১৯৫৯ সালে।
মানসিক হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, অধিগ্রহণ করা জমির সিংহভাগই ছিল পাবনার আধ্যাত্মিক সাধক ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। যদিও জমি অধিগ্রহণের সময় তিনি ভারতে ছিলেন। কিন্তু অধিগ্রহণের অর্থ তার ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালের পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে তার আশ্রমটি এখনো আছে। যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তরা প্রার্থনা করতে আসেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী সেবার তথ্য থেকে জানা গেল, ১৯৫৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আবাসিকে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৮৫ হাজার ৩৮৪ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭২ হাজার ৩৯ জন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যা আরও বেশি।
২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে নারী ছিলেন ১ লাখ ৯৯৬ হাজার ৩৮৯ জন, পুরুষ ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৭ জন।
প্রথমে ৬০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা মানসিক হাসপাতালটি ১৯৬৬ সালে প্রথম দফায় শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ ও পরে ২০০টি করা হয়। ১৯৯৬ সালে শেষ দফায় ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ১২০টি পেয়িং ও ৩৮০টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এখানে চিকিৎসা হয় তিন বিভাগে— অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ ও বিনোদনমূলক বিভাগে।
অন্তর্বিভাগে ৩৫০ জন পুরুষ ও ১০০ নারী চিকিৎসা নিতে পারেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১২০ থেকে ২০০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য পরামর্শ নেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীদের ভিড় থাকে বহির্বিভাগে। বহির্বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কত মানুষ সুস্থ হয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই।
বছরের পর বছর কিংবা যুগের পর যুগ কেটে যাচ্ছে মানসিক হাসপাতালে, এমন রোগী ২১ জন থাকলেও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে বর্তমানে ১১ জন আছেন। তারা শুধু প্রতীক্ষা করেন পরিবার থেকে কেউ একদিন ঠিকই তাদের নিতে আসবে। কিন্তু প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একদিন এখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। সবশেষ ২০১৫ সালে এ রকমভাবে মারা গেছেন দুজন। বর্তমানে ১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু তাদেরও কেউ নিতে আসছে না। তাদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডলি খাতুন, মিনহাজ, আবু সাঈদ হোসেন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পুরোনো রোগী। যারা ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর সুস্থ হয়েও এখন পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারছেন না। হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রার অনুযায়ী আবু সাঈদ হোসেনকে ১৯৯৬ সালে ভর্তি করেন তার আত্মীয়রা। তিনি অনেক আগে সুস্থ হলেও তাকে কেউ নিতে আসছেন না। তাই বছরের পর বছর হাসপাতালে বন্দি থাকতে থাকতে আবারও মানসিকভাবে হতাশ হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এমনও ঘটনা ঘটেছে যে রোগীরা সুস্থ হওয়ার পর তাদের ঠিকানা অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলে কেউ তাদের গ্রহণ করতে চায়নি। অনেক পরিবারে রোগী নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের নাজেহাল হতে হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয়বার করে রোগী নিয়ে গিয়েও ফিরে এসেছেন তারা। ফলে বাকিদেরও পরিবার গ্রহণ করবে কিনা, জানে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালটি কনসালট্যান্ট ও ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট ছাড়াই চলছে। বর্তমানে হাসপাতালের ৩০ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৭ জনের পদই শূন্য। প্রথম শ্রেণির পদসংখ্যা ৩০টির মধ্যে ১৭ পদই শূন্য, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের আট পদের মধ্যে চার পদশূন্য, দ্বিতীয় শ্রেণির ৩১৬টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪১টি, তৃতীয় শ্রেণির ১১৯টির মধ্যে ৩১টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১৭০টি পদের মধ্যে ৯৮টি পদশূন্য রয়েছে।
আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা, অ্যানেসথেটিস্ট, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, বায়োক্যামিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রম। সীমিত চিকিৎসক ও জনবল দিয়েই যথাসম্ভব সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটির জন্য ৩০ জন চিকিৎসকসহ মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৬৪৩। ১৩ চিকিৎসকসহ কর্মরত ৪৫৩ জন এবং শূন্য রয়েছে ১৯০টি পদ। ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল। সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী পদের প্রায় একই অবস্থা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জরুরি ভিত্তিতে সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট ও মেডিকেল অফিসার দ্রুত নিয়োগ করা না গেলে হাসপাতালের চিকিৎসার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালের অবকাঠামো বলতে সবই আছে। দ্বিতল হাসপাতাল ভবনে বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ভবন, বিনোদন বিভাগ, রান্নাঘর, ধোপাঘর, সিনেমা হল, হস্তশিল্প ভবন, কম্পিউটার রুম, তাঁতশিল্প ভবন, ওষুধ ও মালামাল সংরক্ষণ ভান্ডার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও কটেজ মিলিয়ে মোট ৫৩টি ভবন রয়েছে। তবে অধিকাংশ ভবন বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কেউ বসবাস তো দূরের কথা, ওখানে কেউ মনের ভুলেও প্রবেশ করে না। কোনো ভবনে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো ভবনে মাকড়সার ঝাল বুনে দখল করে আছে।
অবকাঠামো জরাজীর্ণ, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের কারণে হাসপাতালটি পরিচালনায় কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। দক্ষ জনবলের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো।
তবে আনন্দের সংবাদ হলো, বহির্বিভাগের রোগীদের হাসপাতাল থেকেই এক থেকে দুই মাসের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ওষুধ বহনের জন্য রোগীর স্বজনদের সরবরাহ করা হয় হাসপাতালের তৈরি ব্যাগ, যা তৈরি করছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারীরা। শুধু তাই নয় এখানে দরজির কাজ, ব্লক বাটিকার কাজ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ফুলের বাগান তৈরি, কৃষিকাজসহ নানা কাজ শেখানো হয়। যাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কিছু একটা করতে পারেন তারা।
এই বিভাগের ইনচার্জ অলক কুমার দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই উদ্যোগ কেবল শুরু হয়েছে। অবশ্যই এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে যারা সুস্থ হওয়ার পথে, তাদের এখানে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে সমাজের বোঝা না হয়ে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এই হস্তশিল্পপণ্য বিক্রি করে রোগী কল্যাণ ফান্ডে টাকা জমা রাখা হয়। রোগীদের জন্য এই টাকা পরবর্তীতে খরচ করা হয়।
ব্রজ গোপাল সাহা পাবনা মানসিক হাসপাতালে অকুপেশন থেরাপিস্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। বয়সের ভারে এখন অনেকটাই ন্যুব্জ। হাসপাতালের সবার কাছে তিনি কালাদা নামে পরিচিত। তার দায়িত্ব ছিল রোগীদের বিনোদন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া। ২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু মায়ার জালে আটকে থাকায় ছাড়তে পারেননি। ব্যক্তি জীবনে সংসার না পাতা মানুষটি এখন সারাদিন রোগীদের ভালো-মন্দ, তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা ও বিনোদনে কাটিয়ে দিতেন। ২০০৫ সালে এখান থেকে চলে গেছেন বলে জানা যায়। এখন তিনি কোথায় আছেন তার ঠিকানা বলতে পারেননি কেউ।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসা আর অন্য হাসপাতালের চিকিৎসায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ অন্য সব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে সঙ্গে পরিবারের সদস্য থাকেন। এখানে সম্পূর্ণ পরিবার ছাড়া থাকতে হয়। তাই তাদের গোসল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত কেটে দিতে হয় রোগীদের। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও পরিবারের মতো আমরা তাদের আদর-যত্ন করি।
মানসিক হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট রেহেনা আলম রিতা ঢাকা পোস্টকে জানান, দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও এখানে কোনো উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক নেই। নার্সিং সুপারভাইজার পাঁচজন হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, হাসপাতালে ১৩টি পুরুষ ওয়ার্ড আছে। সেক্ষেত্রে পুরুষ নার্সিং কর্মকর্তা খুবই কম। এ অবস্থায় পুরুষ ওয়ার্ডগুলোর রোগীদের মহিলা নার্সিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়, যা খুবই দুঃসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয় না। সরকার যদি একটা ঝুঁকি ভাতা দিত, তাহলে নার্সদের জন্য ভালো হতো।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রতন কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে কোনো চিকিৎসকের পোস্টিং দেওয়া হলেই তিনি বা তারা মনে করেন তাকে ‘শাস্তি’ দেওয়া হলো। ফলে এখানে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসক-সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক হাজার শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এসব ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসকের সংখ্যা যেখানে বাড়ানো দরকার, সেখানে অনুমোদিত ৩০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকের পদশূন্য। মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতাল। এর মধ্যে পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ককে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। সেদিক দিয়ে হিসাব করলে চিকিৎসক আরও কম।
ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ২৬৪ জন সিনিয়র নার্সের পদ থাকলেও বর্তমানে শূন্য রয়েছে ১৬টি। স্টাফ নার্সের পাঁচজনের মধ্যে ২২ পদশূন্য। কর্মরত নার্সদের আবাসিক কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালটি শহর থেকে দূরে হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনের জন্য নেই কোনো যানবাহন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংখ্যা অপ্রতুল। সুইপারের ৩০টি পদের মধ্যে ১৭টি পদশূন্য। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালের এমন অবিশ্বাস্য করুণ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। হাসপাতালের সেবার মান আরও উন্নত করতে হলে এখানে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের শূন্যপদ পূরণ করা জরুরি।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহা. আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমৃদ্ধ হাসপাতাল গড়ার চেষ্টা করছি। মানসিক হাসপাতাল সাধারণ হাসপাতালের মতো নয়। এখানকার চিকিৎসাপদ্ধতি শুরু থেকে আলাদা। ফলে জনবল বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু জনবল-সংকট এখন প্রকট। অনেক কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ড্রেনেজ-ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কিছু বিল্ডিং আর অবকাঠামোর দিকে যদি প্রধানমন্ত্রী নজর দিতেন, তাহলে এখানে আরও ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যেই আমরা হাসপাতালকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। রোগীদের কক্ষে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সারাক্ষণ গান শুনতে পারেন। রয়েছে টেলিভিশন, পছন্দমতো অনুষ্ঠান দেখেন সবাই। হাসপাতালের চারপাশ নজরদারিতে রাখার জন্য সম্প্রতি ১০৭টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। লোডশেডিংয়ের সময় হাসপাতাল যাতে অন্ধকারে না থাকে, সেজন্য ৪৮টি সোলার বাতি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে সোলার লাইট লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রোগীদের জন্য একটি লাইব্রেরি তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে।
ডা. আবুল বাশার মোহা. আসাদুজ্জামান বলেন, নারী রোগীদের সুন্দর অবকাশ কাটানোর জন্য একটি ছোট্ট পার্ক ও হ্যান্ডবল খেলার জন্য একটি কোর্ট তৈরি করা হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা পাবনা মানসিক হাসপাতালকে একটি সমৃদ্ধ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
সমস্যায় জর্জরিত এই হাসপাতাল তবু মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। এখনো বিশাল করিডরের এই হাসপাতালের সবুজ চত্বরে ঢুকলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আছে খেলার মাঠ, ব্যায়াম ঘর, ফুল-বাগানে অবসর সময়ে কাজ করেন সুস্থ হওয়া রোগীরা। সবজির বাগানও পরিচর্যা করেন তারা।
এনএ/এএম