মোহাম্মদ ইয়াকুব। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাস করছেন ৪৫ বছর ধরে। শৈশব থেকেই বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার থেকে শুরু করে সাগরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু রোববার (১৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব নিজ চোখে দেখে আর এই দ্বীপে থাকতে চান না। দ্বীপ ছেড়ে কোথায় যাবেন, সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি। এত বছর ধরে দ্বীপে বসবাস করলেও এরকম ঘূর্ণিঝড় তিনি আর কোনো দিন দেখেননি।

সোমবার (১৫ মে) রাতে ঢাকা পোস্টকে ইয়াকুব বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ১০ মিনিট আগে ১১টা ৫০ মিনিটেও দোকানে ছিলাম। পণ্য বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিলাম। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বাতাসের গতিও একদম কম ছিল। মনে করেছিলাম কি আর হবে এই বাতাসের গতিতে। হঠাৎ এমনভাবে বাতাস এলো মনে হচ্ছিল টেলিভিশনে যা বলছে তাই সত্যি হতে চলছে।

তিনি বলেন, দেখি মুহূর্তেই ঘরবাড়ি ও গাছপালা উড়ে যাচ্ছে। এই কয়েক ঘণ্টার মুহূর্ত আমি এখনো ভুলতে পারছি না। ঘূর্ণিঝড় থামলেও এখনো আমার মনটা স্বাভাবিক হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ইয়াকুব। জমিজমা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে চির জীবনের জন্য সেন্টমার্টিন ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। চায়ের দোকানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কেউ আলাপ করলে আবার আতঙ্ক ভর করে তার মধ্যে।

শুধু ইয়াকুব নয়, তার মতো আতঙ্কে আছেন সেন্টমার্টিনের অনেক বাসিন্দা।

সেন্টমার্টিনের আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের দিন সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে চলে যায়। বয়স্ক লোকেরা বলাবলি করছিল এখানে কিসের ঘূর্ণিঝড়, কিছু হবে না। তারপরও আমরা বিজিবি, কোস্ট গার্ডদের সহায়তায় তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ফেরানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। মোখা তাণ্ডব শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে বাতাসের গতির বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। মনে হচ্ছিল, বাতাসের সঙ্গে সাগরের পানি কূলের দিকে চলে আসছে।

তিনি বলেন, দেখি ঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা সবকিছু উড়িয়ে যাচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে তারা অনেকে গাছ চাপা পড়ে আহত হয়েছেন। আমার শৈশব থেকে এ পর্যন্ত আমি এরকম ঘূর্ণিঝড় দেখিনি। চিন্তা করছি, দ্বীপ ছেড়ে চলে যাব। যেকোনো সময় পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এই দ্বীপ। দ্বীপ দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপ ছোট হাওয়ার কারণ আগে দ্বীপের চার পাশে কেয়াবন ও জেগে ওঠা ছোট ছোট বেড়িবাঁধ ছিল। কিছু অসাধু লোক এগুলো ধ্বংস করে ফেলে। তাই দিন দিন দ্বীপে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের কথা স্মরণ করে শুভ বলেন, এখনো ভুলতে পারছি না। মনে হচ্ছিল, এই জনম মনে হয়  এখানেই শেষ।

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টামার্টিনেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২০০ ঘরবাড়ি। এছাড়া অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। প্রচণ্ড গতির বাতাস নিয়ে রোববার (১৪ মে) বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা।

ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত ১২শ ঘর ঘরবাড়ির মেরামতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা প্রদান এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

সোমবার (১৫ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসক সেন্টমার্টিনে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্ত ১২শ ঘরবাড়ির মেরামতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তাসহ দেওয়া হবে। মোখায় মোট ১১ জন আহত হয়েছেন। সেন্টমার্টিন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

/এসএসএইচ/