রংপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। এতে লন্ডভন্ড হয়েছে পীরগাছা ও কাউনিয়ার অন্তত চার-পাঁচটি গ্রাম। এছাড়া ঝোড়ো বাতাসে আম, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা।

সোমবার (১৫ মে) রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। এতে দুই উপজেলায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।

জেলার পীরগাছার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া, পরাণ, শালমারা, ব্রাক্ষ্মণীকুন্ডা বাজার, ছাওলা ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে রাত সোয়া ১০টার পর হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এতে গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ভেঙে যায়। কারো কারো ঘরের চাল উড়ে গেছে। ধসে পড়েছে বাড়ির দেয়ালও। ক্ষতি হয়েছে ধান, ভুট্টা, আম ও কলাগাছের।

কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে কাউনিয়া-রংপুর সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ সরিয়ে নিতে কাজ করেন। তবে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কাউনিয়া সদর উপজেলাসহ হারাগাছের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পীরগাছা ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝড়ে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই।

তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া গ্রামের শাকিব খান শুভ জানান, ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

একই গ্রামের আমজাদ হোসেন রঞ্জু বলেন, সারা দিন আকাশে মেঘ ছিল না। রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ে বাতাসের খুব বেগ ছিল। আমার নিজের দুটি ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। অনেক গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। আশপাশের ঘরবাড়িসহ গ্রামের অনেকের বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়েছে।

তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, রাতে কালবৈশাখী ঝড় থেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

কাউনিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান পিন্টু জানান, রাতের ঝড়ে প্রধান সড়কের পাশে থাকা বড় বড় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে কাউনিয়া-রংপুর সড়কে বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে, টানা কয়েকদিন ধরে দাবদাহের প্রভাবে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। সামান্য বৃষ্টিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী। যেন শান্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে। বৈশাখ শেষে জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে হওয়া এই ঝড়বৃষ্টি চলতি মৌসুমে এই প্রথম।

নগরীর কলেজ রোড এলাকার কামরুল হাসান বলেন, গত কয়েকদিন অনেক গরম ছিল এলাকায়। আমরা ভেবেছিলাম মোখার প্রভাবে অন্তত বৃষ্টি হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। আজ হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় হলো, কিন্তু স্থায়িত্ব খুব কম ছিল। তারপরও বৃষ্টি হওয়ায় শান্তি লাগছে।

শাপলা চত্বর এলাকার মেহেদী হাসান বলেন, যেভাবে বাতাস শুরু হয়েছিল সেভাবে তো ঝড় হলো না। ঘূর্ণিঝড় তো আসতে আসতে চলে গেল, ঠিক মতো বৃষ্টিও হলো না। একটু বৃষ্টি পড়েছে, তবে বাতাসের তীব্রতা বেশি ছিল। যার কারণে পরিবেশটা ঠান্ডা হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসে রাত ১টার দিকে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঢাকার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

/এসএসএইচ/