২০০ বছরের পুরনো মসজিদ পুণঃনির্মাণ নিয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজারের গজুকাটা সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মসজিদটি পুণঃনির্মাণে ভারতীয় সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ জিরোলাইনের ১৫০ গজের ভেতরে প্রবেশ করে বাধা দিয়েছে। 

এতে ১৯৭৫ সালের সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করেছে বিএসএফ। এমনকি ওই এলাকায় মোট ৭টি বাঙ্কারও স্থাপন করেছে বিএসএফ। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার ১৩৫৭ নম্বর পিলারের ভেতরে বাংলাদেশ অংশে গজুকাটা গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ২০০ বছরের পুরনো পাকা ঝুকিপূর্ণ ভবনটি পুণঃনির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বেশ কিছুদিন আগে উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে কাজ শুরু হলে বাধা দেয় বিএসএফ। এর আগেও কাজে বাধা দিয়েছে তারা। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে কাজে বাধা না দেওয়ার আশ্বাস দেয় তারা। ২য় দফায় কাজ শুরু হওয়ার পর এবারও বাধা দিয়েছে তারা। এমনকি ওই এলাকায় ৭টি বাঙ্কার বসিয়েছে বিএসএফ। এতে করে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সিলেট বিয়ানীবাজার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালের আইনে ভারতীয় বাহিনী জিরোলাইনের ১৫০ গজের ভেতরে প্রবেশ করে কোনো ধরনের বাধা প্রদান করতে পারে না। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন-৭ বিএসএফ’র অধিনায়ক বি এস মিনহাজ।

বৈঠকের বিষয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি ৫২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো শাহ আলম সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেল ৫টায় আমরা এ বিষয় নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছি। আমরা আমাদের ইস্যুগুলো উপস্থাপন করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের ভেলিড পয়েন্ট উত্থাপন করেছি, আশা করছি তারা কনসিরাডেশনে নেবে। তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা তাদের হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের জানাবে।

এ ঘটনায় মসজিদ পুণঃনির্মাণের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। মসজিদটির নিচ অংশের পিলারসহ বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতির একপর্যায়ে বিএসফ সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে মসজিদ নির্মাণের কাজে বাধা দেয়।
 
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা গ্রামবাসী বিজিবির সহায়তা চায়। তৎকালীন বিজিবি-৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার বিএসএফ’র কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুরুতে এ নিয়ে বিজিবি’র পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানালেও বিএসএফ তাতে সায় না দিয়ে সীমান্ত এলাকায় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাঙ্কার খনন করে শক্ত অবস্থান নেয়। বিজিবি পাল্টা অবস্থান নিয়ে তাদের জবাবের প্রস্তুতি নিয়ে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলে মঙ্গলবার বিকেলে সেটি অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদের ইমাম হাফিজ বিলাল আহমদ জানিয়েছেন, বিএসএফ এর বাধার পর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। মসজিদের আনুষাঙ্গিক অনেক কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ছাদ ঢালাইয়ের কাজে হাত দেওয়ার সময় বিএসএফ এসে নির্মাণ কাজে বাধা দেয়।  

সিলেটের বিয়ানীবাজার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি ৫২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, বিএসএফ সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতরে মসজিদ নির্মাণ কাজে কোনোক্রমেই বাধা দিতে পারে না। এখানে বাধা দিয়ে তারা অন্যায় করেছে। গজুকাটা সীমান্তসহ তার আওতাধীন সকল এলাকায় বিজিবি শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

তুহিন আহমদ/এমএএস