খাল খননের সঙ্গে চলছে বৃক্ষনিধন
রংপুরের পীরগাছায় খাল খননে শিডিউল না মেনে গাছপালা কাটাসহ কৃষকের জমির আবাদি ফসল নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাটানদীখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির লোকজন কৃষকদের নানাভাবে পুলিশি হয়রানি ও মামলার ভয় দেখিয়ে খালের দুই পাড়ের বেশ কিছু গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা আরও জানান, ফসলি জমিও নষ্ট করেছেন তারা। প্রকৌশলীদের তদারকি না থাকায় শিডিউলের তোয়াক্কা না করে সমিতির লোকজন ইচ্ছেমতো এসব করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
বিজ্ঞাপন
পীরগাছা উপজেলার ৬ নম্বর তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ঘঘোয়া থেকে শুরু করে সোনারা, নটাবাড়ি, আরাজী দেবু এবং পচ্ছিমদেবু পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার মরাখালটি তিনটি ভাগে খনন ও সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য জাইকা থেকে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন কাটানদীখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিডেট সেখানে খননকাজ করছে। কাজটি দেখভাল করছেন রংপুর এলজিইডি ও জাইকার প্রতিনিধিরা।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রকৌশলীদের তদারকি না থাকায় শিডিউলের তোয়াক্কা করছেন না সমিতির লোকজন। বরং বিভিন্ন অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের মতো খাল খননের পাশাপাশি কৃষকদের গাছপালা কাটা ও ফসলি জমি নষ্ট করেছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
তবে কৃষকের পক্ষ থেকে ওঠা এসব অভিযোগ মানতে নারাজ সমিতির লোকজন। আর প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে খাল খননের নির্ধারিত শিডিউল মেনে কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে খাল খনন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিরা।
এলাকার কৃষক বোরহান উদ্দিন মানিক ও রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন পর মরা খালটি খনন করা হচ্ছে। এতে আমরা উপকৃত হব। কিন্তু সমিতির লোকজন খাল খননকাজে সরকারি মাপজোক মানছে না। শিডিউল না মেনে আমাদের জমি দখল, গাছ কেটে নিয়ে যাওয়াসহ জমির ফসল নষ্ট করেছেন। সমিতির লোকজন জোর করে এসব করায় আমরা বাধা দিলে তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
কৃষক সাইফুল ইসলাম ও মুসা মিয়া বলেন, খাল খননের পাশাপাশি আমাদের অনেক ফসল নষ্ট করে বিপুলসংখ্যক ফলদ ও বনজ গাছ কেটে নিয়ে যান সমিতির লোকজন। আমরা এলাকার কৃষক। আমরা চাই এই এলাকায় চাষাবাদ আরও ভালো করার জন্য খাল খনন হোক। কিন্তু তারা পেশিশক্তি ব্যবহার করে খাল খননের নামে গরিবদের লাগানো গাছ কেটে নিয়ে আত্মসাৎ করছেন। এখন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উল্টো আমাদের পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে ইয়াবা-গাঁজার মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমরা কার কাছে বিচার চাইব?
সোনারা এলাকার কৃষক আবদুল গফুর বলেন, অনিয়ম ও শিডিউল না মেনে এভাবে খাল খননের কাজ এলাকার কৃষক কখনো মেনে নেবে না। তারা জোর করে আমাদের জমি ও ফসল নষ্ট করছে। আমরা তাদের বোঝাতে গেলে উল্টো তারা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে আমাদের নামে ইয়াবা, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন। এখন আমরা সমিতির লোকজনের পেশিশক্তি, অব্যাহত হুমকি ও মামলার ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমরা গাছপালা ও ফসলের ক্ষতিপূরণ চাই।
কৃষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাটানদীখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসেনুর রাশেদ সরদার।
মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, খাল খননে কোনো অনিয়ম হয়নি। কাউকে ভয়ভীতি দেখানো বা কারও জমি দখল, গাছ কর্তন করা হয়নি। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, সবকিছু শিডিউল মেনেই হয়েছে। এলাকার কিছু মানুষ ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভিন্নভাবে খননকাজ ব্যাহত করার পাঁয়তারা করছে।
এ ব্যাপারে রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পীরগাছা উপজেলার খাল খননের কাজটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হবে। কাজটি দেখার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী ও জাইকার প্রতিনিধিরা আছেন। এখানে ভেকু যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে ৭০ ভাগ এবং পরবর্তী সময়ে ৩০ ভাগ কাজ সাধারণ মানুষ দিয়ে করা হবে। তারা যদি শিডিউল ও নিয়ম মেনে কাজ না করেন, তাহলে তাদের অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না।
একই সঙ্গে কৃষকদের গাছ কেটে নেওয়া এবং ফসলি জমি নষ্টের যে অভিযোগগুলো পাওয়া গেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখব। কারও ক্ষতি করে খননকাজ করা হবে না। কারণ, কৃষকদের উপকার, কৃষি ও মৎস্য চাষ বাড়ানোর জন্যই এই খননকাজ হচ্ছে। শিডিউল মেনেই কাজ সম্পন্ন করা হবে, যোগ করেন তিনি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ