নোয়াখালীর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যানের বাড়ির সালিশ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়া সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. দুলালের (৪৭) গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপর করা ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বুধবার (৩১ মে) সন্ধ্যা থেকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ওই ভিডিওটিতে দুলালের দেওয়া তথ্যগুলো নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

ভিডিওটি দুলাল মেম্বার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন তার বড় ছেলে আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, আরও কিছু ভিডিও আমাদের কাছে আছে যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে বাবা হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেছেন। আমরা চাই দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হোক। যারা মূল পরিকল্পনাকারী তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। 

৪১ সেকেন্ডর ওই ভিডিওতে দেখা যায় আহত হয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন দুলাল মেম্বার। ভিডিওতে দুলাল মেম্বারকে বলতে শোনা যায়, ‘একগা সুমিন্যা' (একজন সুমন)। পাশে থাকা লোকদের মধ্যে একজন জানতে চেয়ে বলেন, ‘সুমন ইগা কে? কার লগে চলাফেরা করে?’ (সুমন কে, সে কার সাথে চলাফেরা করে)। জবাবে দুলাল মেম্বার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের লোক’। পাশে থাকা ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করে ‘বর্তমানে জসিম চেয়ারম্যানের লগে রানিং চলাফেরা করে?। মেম্বার বলেন, ‘জসিম চেয়ারম্যানের লোক। আরেকগা অইছে ইউছুফিয়ার ভাই ফারুক মাঝির।’  পাশে থাকা ব্যক্তি জানতে চায়, ‘ফিরোইজ্যা?’ দুলাল মেম্বার বলে ‘ফিরোইজ্যা ইগার নাম, আরেকগা অইলো নুর হুসুইন্নার হোলা সবুইজ্জা’ (ফিরোজ তার নাম, আরেকজন নূর হোসেনের ছেলে সবুজ)। তখন একজন জানতে চায়, ‘আন্নে এই তিনুগারে দেখছেন?’ (আপনি তিনজনকে দেখেছেন)। দুলাল মেম্বার বলে ‘আর গুনরে চিনি ন।’ (আর কাউকে চিনেন না)।

আরও পড়ুন : সালিশ থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ আ.লীগ নেতার মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২ 

এবিষয়ে জানতে চাইলে আন্ডারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ভিডিওটি আমার নজরে এসেছে। আমি যেহেতু এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সেহেতু পুরো আন্ডারচর ইউনিয়নের ৪০ হাজার লোকই আমার। এখানে আমার লোক বলে যে সুমনের নাম এসেছে, সে আসলে ওই অর্থে আমার লোক না। সে আমার এলাকার বাসিন্দা এবং সে গত নির্বাচনে আমার পক্ষে ভোট করেছিল। যেহেতু মেম্বারের বক্তব্যে সুমনের নাম এসেছে তাই প্রশাসনসহ আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভিডিওতে শুনা যাচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ একজন সুমন আমার লোক বলে দুলাল মেম্বারের মুখে স্বীকার করাচ্ছে। গত নির্বাচনে যারা আমার প্রতিপক্ষ ছিল তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছে।

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে সুধারাম মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ভিডিওটি আমাদের নজরেও এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে দুলাল মেম্বার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় সবুজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যার নাম ওই ভিডিওতে দুলাল মেম্বার বলেছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত সবুজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকা স্বীকার করে আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি এবং এর পেছনে যারা রয়েছেন আমরা তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার দিকে আন্ডারচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়াম্যান জসিম উদ্দিনের বাড়িতে একটি সালিশ করতে যান দুলাল মেম্বার। সালিশ শেষে তিনি হাসান ও শহীদ মাঝির সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথে মোটরসাইকেলটি জসিম চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছে বাংলাবাজারের পূর্ব পাশে জাকিরের বাড়ির সামনে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। 

এতে ২ রাউন্ড গুলি দুলালের পিঠের বাম পাশে এবং ডান হাতে বিদ্ধ হয়। তবে মোটরসাইকেলে থাকা দুলালের সহযোগী মোটরসাইকেল চালক হাসান ও শহীদ মাঝি অক্ষত ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এসে দুলালকে উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহতের মা নুরের নেছা বাদী হয়ে একইদিন সকালে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকেলে জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মো. সবুজ (৩০) নামের এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আমলি আদালত-১ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোসলে উদ্দিন মিজান জবানবন্দি রেকর্ড করেন। স্বীকারোক্তি দেওয়া মো. সবুজ আন্ডারচর ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে। বুধবার সকালে নিহত দুলাল মেম্বারের মরদেহ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/আরকে